প্রযুক্তির পথে এগোচ্ছে হাইআতুল উলয়া

19

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কওমি অঙ্গনে বয়স্ক আলেমদের মধ্যে প্রযুক্তি নিয়ে অনাগ্রহ ছিল বরাবরই। তবে শিক্ষার্থীদের ফলফল ও সনদ নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশনের দিকে যেতে বাধ্য হচ্ছে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার আয়োজক সংস্থা আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার্থীদের যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহারের উদ্যোগ নিচ্ছে সংস্থাটি। এটি চালু হলে, দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে পরীক্ষার্থীরা ফরম পূরণ, প্রবেশপত্র সংগ্রহ, ফলাফল ও সনদপত্র সংক্রান্ত আবেদন অনলাইনেই করতে পারবে। সংস্থাটির কর্তারা বলছেন, এ বছরের মধ্যেই ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশনের কাজ শেষ হবে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান করার কথা ঘোষণা করেন। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
“আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ”-এর অধীন ‘কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান বিল ২০১৮’ জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয় ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। বিলটি পাস হয় ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। এরপর থেকেই সংস্থাটি দেশের সকল মাদ্রাসা দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার আয়োজন করছে।
তবে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ, প্রবেশপত্র সংগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জটিলতা দেখা দেয়। ফল প্রকাশের পদ্ধতি নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। সনদে নামের বানান ভুল হওয়ার অভিযোগ নিয়েও বিপত্তিতে আছে সংস্থাটি।
হাইআতুল উলয়া সূত্রে জানা গেছে, এক্সামিনেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংক্রান্ত সফটওয়্যার তৈরির কথা ভাবছে সংস্থাটির শীর্ষ ব্যক্তিরা। এজন্য সফটওয়্যার বিষয়ক সাব-কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি চারটি সভা করে বেশকিছু সুপারিশ করে আল-হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির কাছে। সুপারিশে বলা হয়েছে- অটোমেশন পদ্ধতি আধুনিক ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন না হলে সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের ফল প্রকাশের দিন অনলাইনে যে ভোগান্তি হয়, সেটাও হতে পারে। অনেক বেশি মানুষ একসঙ্গে কাজ করতে সক্ষম এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এক্সামিনেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু হলে পরীক্ষার্থীরা অনলাইনে যে কোনও আবেদন করতে পারবে। সফটওয়্যারটি নিজস্ব উদ্যোগে তৈরির সুপারিশও করে কমিটি। তবে নিজস্ব উদ্যোগে সম্ভব না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হবে।
সফটওয়্যার বিষয়ক সাব-কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘সারা দেশের আনাচে-কানাচে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। যাদের পক্ষে সব সময় ঢাকায় এসে পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো আধুনিক ও প্রযুক্তিবান্ধব করা হবে হাইআতুল উলয়াকে। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তা খোঁজ নিচ্ছি।’
কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা হাতে লিখে ফরম পূরণ করার কারণে অনেক সময় তাদের নাম, পিতা-মাতার নামসহ অন্যান্য তথ্য ভুল হয়। অনলাইন পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই চেক করে ফরম পূরণ করবে অথবা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করবে। এতে ভুল কমবে।
সংস্থাটি বলছে, অটোমেশন চালু হলেও সংস্থার অধীন সকল মাদ্রাসার বোর্ড, মাদ্রাসা ও শিক্ষার্থীদের তথ্য পৃথকভাবেই হালনাগাদ থাকবে। অন্যদিকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে মাদ্রাসা, বোর্ড ভিত্তিক ফলাফল ও পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্যের পরিসংখ্যানও বের করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে আল-হাইআতুল উলয়া’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমূদ বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংস্থার যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। সফটওয়্যার বিষয়ক সাব-কমিটিও করা আছে। কমিটির প্রস্তাবনার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।