দোয়ারাবাজারে ৫২ বছর থেকে বাঁশের সাঁকোই ১০ গ্রামের মানুষের ভরসা

58

শাহ্ মাশুক নাঈম, দোয়ারাবাজার থেকে

সেতু নেই! বাঁশের সাঁকোই ১০ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। অপেক্ষায় কেটেছে ৫২ বছর! কত সরকার এলোগেলো কেউ কথা রাখেনি। খাশিয়ামারা নদীর উপশাখা শিমুলতলা গ্রামের এ সেতুও হয়নি। সেতু না হওয়ার কষ্টে রয়েছেন ১০ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। দুর্ভোগ সয়ে বছরকা-বছর, বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন।
এখানে সেতু না থাকায় এলাকার রাস্তাসহ অন্য কোনো উন্নয়নও হয়নি। এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেছেন, ৮০ বছরের বৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। তিনি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা। খাশিয়ামারা নদীর উপশাখার সাঁকোর পাড়েই তাঁর বাড়ি। আর এ সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় জেলা সদর ও স্হানীয় বাজারে। তাঁর মতো হাজারো মানুষের দাবি এই খালের উপরে একটি সেতু নির্মাণের। সরেজমিন দেখা যায়, খাশিয়ামারা নদীর একটি উপশাখা, শিমুলতলা গ্রাম ও সমুজ আলী ইস্কুল এন্ড কলেজের মধ্যবর্তী খালের উপরে দেয়া হয়েছে বিশাল একটি বাঁশের সাঁকো। আর এ সাঁকো পার হয়ে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। সাঁকোর পশ্চিম পাড়ে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। টিলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমুজ আলী ইস্কুল এন্ড কলেজ। শিক্ষার্থীসহ আর ১০টি গ্রামের মানুষ সাঁকো পারপার হয়ে এপার-ওপারে যাচ্ছে।
অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিদিন। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে, সব বয়সী মানুষ। সাঁকো পারাপারে ঝুঁকি থাকায় স্কুলগামী শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ-গর্ভবতী মায়েদের নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয় সবাইকে। গর্ভবতী মায়েদের জরুরি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য দীর্ঘ পথ ঘুরে সড়কে উঠতে হয়। নিরুপায় হয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত পার হচ্ছেন এই বাঁশের সাঁকো।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাঁশের সাঁকোর স্থলে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছে ১০ গ্রামসহ এলাকাবাসী। শুধু আশ্বাসেই আটকে আছে সেতু। সবাই বলে সেতু হবে, কিন্তু হচ্ছে না। আশ্বাস পেতে-পেতে মানুষ এখন বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। অনেকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও সেতু হচ্ছে না। বর্ষায় ভারি বর্ষণে বাঁশের সাঁকো পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রতি বছর এলাকাবাসীর চাঁদায় ও বাঁশ সংগ্রহ করে দেয়া হয় বাঁশের সাঁকো। আর এ সাঁকো পার হয়ে নিত্যদিন কৃষিপণ্য নিয়ে যেতে হয় স্হানীয় মহব্বতপুর বাজার ও উপজেলা সদরে।
টিলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম দৈনিক কাজির বাজার-কে বলেন, এই বাঁশের সাকো পারাবার হয়ে প্রতিদিন কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা আমার বিদ্যালয়ে আসে। সাঁকো পারাপারে ছোটখাটো দুর্ঘটনা সব সময়ই ঘটিতেছে। বিশেষত বিদ্যালয়গামী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য এই বাঁশের সাঁকো অনেক বড় ঝুঁকি। সর্বক্ষণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কে থাকি। কখন দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। আমাদের দাবি এখানে সাঁকো স্হলে একটি ব্রিজ হোক।
সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ দৈনিক কাজির বাজার-কে বলেন, গত কয়েকদিন আগে একটি উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা সভায় এ সেতুর কথা আলোচনা হয়েছে। এখানে সেতু হওয়ার জন্য ছাতক-দোয়ারাবাজারের এমপি মহোদয় খুবই আন্তরিক। সব মিলিয়ে আমরাও চেষ্টা করছি অতিদ্রæতই সাঁকো স্হলে একটি ব্রিজ নির্মাণের।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ মুর্শেদ মিশু দৈনিক কাজিরবাজারকে বলেন, শিমুলতলা গ্রাম ও সমুজ আলী ইস্কুল এন্ড কলেজের মধ্যবর্তী খালের উপর সেতুর কথা আজ প্রথম শুনলাম, সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা
মানছুরুল হকের মোবাইল ফোনে বারবার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।