ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৩

56

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষ তুলনামূলকভাবে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারলেও দুর্ঘটনা পিছু ছাড়েনি তাদের। গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চার দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে অর্ধশতাধিক প্রাণ। আহত হয়েছে শতাধিকেরও বেশি মানুষ।
আজ শুক্রবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে চার দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার চার জেলায় নিহত হয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে নেত্রকোনায় দুইজন, গোপালগঞ্জে একজন, সিরাজগঞ্জে চারজন ও নারায়ণগঞ্জে চারজন নিহত হয়েছেন।
ঈদের দিন বুধবার নিহত হয়েছেন ২৯ জন। এর মধ্যে ফরিদপুরে ছয়জন, লালমনিরহাটে চারজন, ঝিনাইদহে দুইজন, ঢাকায় দুইজন, নরসিংদীতে তিনজন, টাঙ্গাইলে দুইজন, বাগেরহাটে দুইজন, সিরাজগঞ্জে তিনজন, হবিগঞ্জে একজন, গাজীপুরে একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন নিহত হয়েছেন।
ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ পাঁচ জেলায় মারা গেছেন নয় জন। এর মধ্যে ঢাকায় তিনজন, বগুড়ায় একজন, ভোলায় দুই ভাই, লক্ষীপুরে একজন এবং সিরাজগঞ্জে দুইজন নিহত হয়েছেন।
আর আজ শুক্রবারও বগুড়ায় একজন, মাগুরায় একজন এবং কক্সবাজারের চকরিয়ায় দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চার দিনের দুর্ঘটনার খবর সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় ঝরেছে ১১ প্রাণ : ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার নেত্রকোণায় সদর উপজেলার চল্লিশা এলাকায় বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
গোপালগঞ্জে নানা বাড়ি ঈদ করতে গিয়ে মাইক্রোবাস চাপায় প্রাণ হারান মানিক শেখ নামে এক মাদ্রাসাছাত্র। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গেড়াখোলা সেতুর কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
একই দিন ভোরে সিরাজগঞ্জের ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে রায়গঞ্জ উপজেলার দাথিয়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস খাদে পড়ে চারজন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তারাবো পৌরসভার কর্নগোপ এলাকায় বাসের সঙ্গে লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে নারীসহ চারজন নিহত হন। আহত হয়েছেন ছয়জন।
ঈদের দিনে প্রাণ হারান ২৯ জন : এবারের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ঈদের দিন বুধবার। সেদিন সকালে ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। উপজেলার ধুলদী রেলগেট এলাকায় একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
লালমনিরহাটে পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চারজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়। সদর উপজেলার বড়বাড়ি বাজারে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
সাভারের আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় পুলিশবাহী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে লিচুবোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষে শিল্প পুলিশের কনস্টেবল নাদিম হোসেন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শিল্প পুলিশের আরও তিন সদস্যসহ মোট চারজন আহত হয়েছেন। আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের গণকবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ওইদিন সন্ধ্যায় ধামরাইয়ে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাইভেটকারের চালক নান্দু মোল্লা নিহত হয়েছেন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বাথুলী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুপুরে নরসিংদীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হন। সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভগিরথপুর এবং শিবপুরের সিএনবি এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার সল্লা এলাকায় পিকআপ ভ্যানে বাসের ধাক্কায় দুই যুবক নিহত হন ঈদের দিন দুপুরে। মোটরসাইকেলের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানটি পাল্লা দিতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে পৃথক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হন।
বাগেরহাট মোরেলগঞ্জের মহিষপুরা এলাকায় দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই আরোহী নিহত হন ঈদের দিন রাতে। আহত হয়েছেন আরও এক আরোহী।
একই দিন বিকালে সুনামগঞ্জের দিরাই-মদনপুর সড়কে বাসচাপায় নাসিম চৌধুরী রাশেদ নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়।
বিকালে গাজীপুরের মাওনা-গফরগাঁও আঞ্চলিক মহাসড়কের দুর্লভপুর এলাকায় চারটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সজীব হোসেন নামে এক যুবক নিহত হন। আহত হন আরও সাত মোটরসাইকেল আরোহী।
ওইদিন ব্কিালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ইমন মিয়া নামে এক কিশোর নিহত হন। উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইমন উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে।
রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলে সড়ক দুর্ঘটনায় ইমন নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকার হাতিরঝিলে আসেন ইমন। মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় হাতিরঝিলের মোড়ে একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে সংঘর্ষে ইমন ও জয় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় বাসচাপায় নাসিম চৌধুরী রাশেদ নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন।
একইদিন ঝিনাইদহের মহেশপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ঈদের দিন মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। উপজেলার খোর্দ্দ-খালিশপুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঈদের পরদিন ঝরে ৯ প্রাণ : ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। এছাড়া যাত্রাবাড়ীর ধলপুরমুখী ঢালে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে মারা যান রিয়াজ আহামেদ কাওছার নামের এক শিক্ষার্থী। আহত হয় তার বন্ধু সোহাগ।
একইদিন ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ এলাকায় দুই বাসের সংঘর্ষে শহিদুল ইসলাম নামে এক বাসচালক নিহত হন।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা এলাকার ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই সহোদর নিহত হয়েছেন। তারা হলেন দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার আব্দুল হকের ছেলে ইকবাল হোসেন ও সোহাগ।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মুন্সিরহাট এলাকায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে গামেন্টস শ্রমিক আবুল বাসার নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আরও দুইজন আহত হন।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চালকসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে উপজেলার হরিণচড়া বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
শুক্রবারও ঝরেছে চার প্রাণ : শুক্রবারও তিন জেলায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বগুড়ায় একজন, মাগুরায় একজন এবং কক্সবাজারের চকরিয়ায় দুইজন মারা যান।
সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার খুটাখালী মেধাকচ্ছপিয়া ঢালায় বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে দুইজন নিহত এবং ১০ জন আহত হন।
নিহতরা হলেন, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের উত্তর ফুলছড়ি গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রওশন আরা এবং ডুলাহাজারা ইউনিয়নের চা বাগান এলাকার দিপক পালের ছেলে সনাক পাল।
বেলা ১১টার দিকে বগুড়া-নামুজা সড়কের টেংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন হামিদা বেগম নামে এক বৃদ্ধা। তিনি বগুড়া সদরের ছোট টেংরা গ্রামের হায়দার আলীর স্ত্রী।
এছাড়া সকাল নয়টার দিকে মাগুরা সদর উপজেলার পাকা কাঞ্চনপুর গ্রামে মোটরসাইকেল ও নসিমনের সংঘর্ষে সোহাগ মোল্যা নামে এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়। সোহাগ শালিখা উপজেলার ছানি আড়াপাড়া গ্রামের ওহাব মোল্যার ছেলে।