কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ পবিত্র মাহে রমজানের ২০তম দিবস। দিবসটি প্রত্যেক মহল্লাবাসীর জন্য ব্যস্ততারও বটে। কারণ, আজ নারী পুরুষের অনেকেই ইতিকাফ জীবন বরণ করে নেবেন। ইতিকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা কোন বস্তুর ওপর স্থায়ীভাবে থাকা। ইতিকাফের মধ্যে নিজের সত্তাকে আটকিয়ে রাখা হয় এবং নিজেকে মসজিদ হতে বের হওয়া ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। শরিয়াতের পরিভাষায় ইতিকাফের নিয়্যতে পুরুষের ওই মসজিদে অবস্থান করা যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয় অথবা মহিলাদের নিজ ঘরে নামাজের স্থানে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। বর্তমান বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের অবস্থাও করোনাভাইরাসের কারণে নাজুক ও পেরেশানগ্রস্ত। মসজিদে মুসল্লিদের অবস্থান স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তাই প্রায় সর্বত্র ইতিকাফ থাকার ব্যাপারে সকলের মাথায় সে বিষয়টিও কাজ করছে।
সুন্নাত ইতিকাফের নিয়্যত বিশ তারিখ রমজান সূর্যাস্তের পূর্বেই করতে হবে। যদি সূর্যাস্তের পর নিয়্যত করা হয়, তবে এ ইতিকাফ সুন্নাত থাকবে না, বরং নফল হয়ে যাবে। কেননা, নিয়্যত করার পূর্বে শেষ দশদিনের কিছু অংশ এরূপ অতিবাহিত হয়ে গেছে, যেখানে ইতিকাফের নিয়্যত করা হয়নি। সুতরাং পুরো দশদিনের ইতিকাফ হয়নি।
ইতিকাফের আদবসমূহ :
১. অহেতুক কথা না বলা। যথাসম্ভব পুণ্যের আলোচনায় মশগুল থাকা।
২. উত্তম মসজিদ নির্বাচন করা। যেমন মসজিদে হারাম বা জামে মসজিদ ইত্যাদি।
৩. বেশি বেশি করে কুরআন শরিফ এবং হাদীস শরিফ পাঠ করা।
৪. জিকর করা।
৫. ইলমে দীন শিক্ষা করা।
৬. ইলমে দীন শিক্ষা দেয়া।
৭. সীরাতুন্নবী (স.) অধ্যয়ন করা।
৮. আম্বিয়া এবং আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনী পাঠ করা।
৯. শরয়ী আহকামের কিতাবাদি পাঠ ও রচনা করা।
১০. যেসব কথায় গোনাহও নেই এবং সাওয়াব নেই, অর্থাৎ মোবাহ কথা প্রয়োজন ছাড়া না বলা (আলমগীরী, ১ম খন্ড, শামী ২য় খন্ড ও মারাকিল ফালাহ)।
যে যে কারণে ইতিকাফ ভঙ্গ হয় :
ইতিকাফকারী ব্যক্তি শরয়ী প্রয়োজন এবং মানবীয় প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে মসজিদের বাইরে গেলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। শরয়ী প্রয়োজন যেমন জুমার সালাতের জন্য বের হওয়া। মানবীয় প্রয়োজন যেমন মল মূত্র ত্যাগ করার জন্য যাওয়া। মহিলাগণ যদি ইতিকাফের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে ঘরের অন্যত্র যায় তবে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। (আলমগীরী ১ম খন্ড)।
প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার পর অল্প সময় মসজিদের বাইরে থাকলেও ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে বের হলেও এ হুকুম প্রযোজ্য হবে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড)।
ইতিকাফ অবস্থায় যদি কোন মহিলার মাসিক এসে যায়, তবে তার ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে, ২য় খন্ড)।
ওপরে বর্ণিত কারণসমূহের দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা পরবর্তীতে যথানিয়মে কাযা করে নিতে হবে।
ইতিকাফকারীর জন্য জায়িয কাজসমূহ :
১. মসজিদে পানাহার করা
২. মসজিদে নিদ্রা যাওয়া
৩. মসজিদের মিনারায় আরোহন করা।
৪. মসজিদে অজু বা গোসল করার দ্বারা যদি মসজিদ অপবিত্র বা ময়লাযুক্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে তবে মসজিদে অজু বা গোসল করা।
৫. ইতিকাফকারীর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং মাথায় তেল লাগানো জায়িয। (আলমগীর, ১ম খন্ড)।
আমাদের ইতিকাফ যেন হয় কবরে একাকী থাকার প্রশিক্ষণ স্বরূপ এবং নিজ পরিবার নিজের অবর্তমানে হক হালালিভাবে চলছে কিনা বা চলবে কিনা তা নিরাপদ দূরত্বে থেকে পর্যবেক্ষণ করা। নবীজী (স.) ইতিকাফ থেকে মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শব-ই কদর তালাশ করার পরামর্শ দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে ইতিকাফের মতো মহাফজিলতপূর্ণ ইবাদাতে অংশগ্রহণের তাওফিক দান করুন।