কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ঝড়ের কাছে ‘মোদি ম্যাজিক’ পরাজিত হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির বাঘা বাঘা নেতা পশ্চিমবঙ্গ চষে বেড়িয়ে সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলতে চেয়েছিলেন। তাতে সুফল মেলেনি। এ রাজ্যে হ্যাটট্রিক সরকার গড়ছেন মমতা ব্যানার্জী। তবে গত বিধানসভার চেয়ে এবার বহু আসন বেশি পেয়েছে গেরুয়া শিবির। অপরদিকে বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফ জোটের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়।
রবিবার প্রকাশিত নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফলে মমতা ব্যানার্জীর তুণমূল কংগ্রেস-২১২ ও বিজেপি ৭৮ আসনে এগিয়েছিল। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাম ও কংগ্রেস কোন আসন পায়নি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মোট ২৯৪ আসন। এ রাজ্যে সরকার গড়তে দরকার ১৪৮ আসন।
এ নির্বাচনে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা নন্দীগ্রামে প্রথমে মমতা ব্যানার্জীর জয়ের খবর দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী জয় পান। ২০১১ সালে মমতার পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ক্ষমতায় আসতে সেবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল নন্দীগ্রাম। সে সময় মমতারই প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী এবার ছিলেন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া সেই শুভেন্দুকে হারালেন তিনি। শুভেন্দুর চেয়ে এক হাজার ২০১ ভোট বেশি পেয়েছেন মমতা। জয়ের পর সমর্থকদের বিজয় মিছিল থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান মমতা।
‘এবার, ২০০ পার’ স্লোগান নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিজেপি। তবে নির্বাচনে ভোট গণনার প্রাথমিক ফলাফলে সেই স্লোগানের বদলে বিজেপি কার্যত ১শ’ আসনও পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতির জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথা নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের দিকে আঙুল তোলা শুরু করেছেন বিজেপির রাজ্য নেতাদের একাংশ।
নির্দিষ্ট করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম করে আঙুল না তুললেও বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতাদের ইঙ্গিত স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ভাষায়, সেনাপতি হয়েছিলেন যারা, জিতলে তারা কৃতিত্ব নিতেন। এখন হারের দায়ও তাদের নিতে হবে।
প্রথম থেকেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে নিয়ে নেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কোন্ এলাকায় দল কেমন অবস্থায় রয়েছে তা দেখতে ৫ কেন্দ্রীয় নেতার হাতে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর কী না করেছে বিজেপি। ২৯৪টি আসনে আলাদা আলাদা কর্মসূচি ছিল তাদের।
কৃষক সুরক্ষা যাত্রা থেকে কৃষকদের সঙ্গে ‘একসঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার’ মতো কর্মসূচীর পর কর্মসূচী পরিচালনা করেছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রাজ্যে সাংগঠনিক কাজে জোর দেয়া যায়নি বলে সেই সময়েই বিজেপির অনেক নেতা অভিযোগ তুলেছিলেন। তারা বলেছিলেন, আমরা জিতলে রাজ্যের সংগঠনের জোরেই জিতব। আর হারলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডের জন্য।
এ নির্বাচনে কার্যত সিপিএম-কংগ্রেস-আইএসএফের ভরাডুবি হয়েছে। ভোটের ফলের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম সাড়ে তিন শতাংশ ও কংগ্রেস আড়াই শতাংশ ভোট পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এ প্রবণতা বজায় থাকলে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে সিপিএম-কংগ্রেস।
তৃণমূল কংগ্রেসের বিশাল জয়ে মমতা ব্যানার্জীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উত্তর প্রদেশের নেতা অখিলেশ যাদব, শারদ পাওয়ার ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
প্রথম দফায় গত ২৭ মার্চ ৩০, দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল ৩০, তৃতীয় দফায় ৬ এপ্রিল ৩১, চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল ৪৪, পঞ্চম দফায় ১৭ এপ্রিল ৪৫, ষষ্ঠ দফায় ২২ এপ্রিল ৪৩ ও সপ্তম দফায় ২৬ এপ্রিল ৩৪ আসনে ভোট নেয়া হয়। তবে দুই প্রার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় সপ্তম দফায় ৩৬ আসনের পরিবর্তে ৩৪ আসনে ভোট নেয়া হয়। ভোটগ্রহণের দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।
অসম ও পদুচেরিতে এগিয়ে বিজেপি, কেরলে বাম তামিলনাড়ুতে ডিএমকে ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও তিন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত একটি অঞ্চলের নির্বাচনের ফল রবিবার ঘোষণা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অপর তিন রাজ্য হচ্ছে অসম, কেরল ও তামিলনাড়ু। আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি হলো পদুচেরি। খবর ওয়েবসাইটের।
সর্বশেষ হিসেবে বলা হয়েছে, অসম রাজ্য ও পদুচেরি ছাড়া বাকি তিন রাজ্যে পিছিয়ে রয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে তামিলনাড়ু ও কেরলে বিজেপি জয়ের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। কেরলে বাম ও তামিলনাডুতে ডিএমকে সরকার গড়তে যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯২ আসনের ভোট গণনা রবিবার ভারতীয় সময় সকাল আটটা থেকে শুরু হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, সময় যত বাড়ছে, ততই বিজেপির সঙ্গে ব্যবধান বাড়াচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।