কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনার প্রকোপে বিপর্যস্ত গোটা ভারত। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা রাজধানী দিল্লীর। তবে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক দেশ হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলানোর মতো যথেষ্ট টিকার মজুদ তাদের হাতে নেই। এরই মধ্যে দিল্লীতে টিকার মজুদ শেষ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লীবাসীকে টিকার জন্য লাইনে না দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন। দিল্লীর পাশাপাশি মুম্বাইতেও টিকার ঘাটতি দেখা দেয়ায় শুক্রবার থেকে তিনদিন টিকা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় তিন লাখ ৮৬ হাজার ৪৫২ জনের দেহে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত ও তিন হাজার ৪৯৮ জনের মৃত্যুর নতুন রেকর্ডের খবর দিয়েছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটে ভারতে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৭ লাখ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে এর আগের ৭৭ লাখ শনাক্তে সময় লেগেছিল প্রায় ছয় মাস। ভারতে সরকারীভাবে শনাক্তের যে খবর মিলছে তাকে সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র বলতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। তাদের হিসাবে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সরকারী হিসাবের অন্তত ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি। মহামারীর এ পর্যায়ে হাসপাতাল ও মর্গে উপচেপড়া ভিড়, ওষুধ-অক্সিজেনের সঙ্কট আর বড় বড় শহরগুলোতে চলাফেরায় কঠোর বিধিনিষেধ ভারতকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশটির কিছু কিছু রাজ্যে শ্মশানগুলোতে দেখা যাচ্ছে লাশের দীর্ঘ সারি। অনেক শহরের কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ সৎকারে অস্থায়ী শ্মশান বানাতে জায়গা খুঁজছে। জেসমিন নামে এক নারী বলেন, টিকা নিতে আমি ২৮ দিন আগে নিবন্ধন করেছি। অথচ এখন তারা বলছে টিকা নেই। জানুয়ারিতে দেশটিতে টিকাদান কর্মসূচী শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তারা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশকে টিকার প্রথম ডোজ দিতে পেরেছে।
ভারত প্রথমদিকে আগস্টের মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু সংক্রমণের উর্ধগতি দেখে পরে টিকাদানের আওতা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কাঁচামালের সঙ্কট ও সেরাম ইনস্টিটিউটে অগ্নিকাণ্ডের কারণে দুটি ভ্যাকসিনের উৎপাদন সক্ষমতা মাসে ৮ কোটি ডোজের ওপরে নিতে পারছে না তারা। সেরাম ইনস্টিটিউটই ভারতে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা বানাচ্ছে। এদিকে করোনা মহামারীর সময়ে সকল বিভেদ ভুলে অবশেষে চীনের সহায়তা গ্রহণে রাজি হয়েছে ভারত। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বের অনেক দেশ ভারতের সাহায্যে এগিয়ে আসছে। এরই মধ্যে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেছে। করোনা মহামারীতে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে বিদেশী ত্রাণ নিতে বাধ্য হচ্ছে ভারত। ১৬ বছর আগে দরিদ্র দেশের তকমা কাটিয়ে উঠতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ত্রাণ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। কিন্তু মহামারীর প্রকোপে সেই পণ থেকে সরে আসতে হলো ভারতকে। বিগত কয়েক বছরে চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটির সাহায্য নিতে রাজি হয়েছে মোদী সরকার। ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সান উইদং বলেন, চীনের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহকারীরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন যাতে ভারতকে কমপক্ষে ২৫ হাজার অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সময় মতো দেয়া যায়। এ ব্যাপারে দিল্লীর যুক্তি, ‘ভারত কারও কাছে সাহায্য চায়নি। তবে কোন কোন দেশের সরকার বা সেখানকার বেসরকারী সংস্থা যদি উপহার হিসেবে কিছু সাহায্য বা অনুদান দিতে চান, তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গেই গ্রহণ করব আমরা’।