দোকান শপিংমল মার্কেট কাল থেকে খুলছে ॥ বেচাকেনা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি বিবেচনা করে ঈদ সামনে রেখে আগামীকাল রবিবার থেকে দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও বিপণী বিতান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে শুক্রবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মূলত ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, শুধু ঢাকা শহরে সাড়ে ৪ লাখ দোকান এবং সাড়ে ৬ হাজারের মতো মার্কেট, বিপণী বিতান শপিংমল ও ফ্যাশন হাউস রয়েছে। সারাদেশে এই সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। আর এসব দোকানপাট ও শপিংমল সরাসরি চাকরি করছেন ৬০-৭০ লাখ মানুষ। অর্থনীতিতে এর প্রভাব অনেক। ঈদের সময় যে পরিমাণ বেচাকেনা হয়ে থাকে তা প্রায় সারা বছরের অর্ধেক। ব্যবসায়ীরা দাবি করে আসছিলেন, যদি দোকানপাট ও মর্কেট খুলে দেয়া না হয় তাহলে তারা মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। আর তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে করোনা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
সরকারী প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে নির্দেশনা জারি করা হলো, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার-সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে চলছে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ যা ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বহাল থাকছে। এ লকডাউনে শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুইদিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সব ধরনের অফিস ও পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তরোঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেয়া হয়।
লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো। তবে শেষ দফায় লকডাউন ঘোষণার আগে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনায় ও ঈদ সামনে রেখে তা শিথিল করার ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে দোকানপাট খোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছেন কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ী এবং শিল্পোদ্যোক্তারা। এর মধ্যে দেশের মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতানের প্রায় ২০ লাখ দোকানদার ব্যবসায়ীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। তাদের সারা বছরের প্রায় অর্ধেক বেচাবিক্রি হয়ে থাকে ঈদের এই সময়টাতে। ঈদ বাণিজ্যের মাধ্যমে সারাবছরের অর্ধেক মুনাফা অর্জিত হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউনের মধ্যে বর্তমান মার্কেটগুলো এখন বন্ধ থাকছে।
আগামী ২০ রোজা সামনে রেখে মার্কেট ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়া না হলে ঈদ বাণিজ্যে ধস নামার আশঙ্কা করেছিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি কর্মকর্তারা। সংগঠনটির সভাপতি মোঃ হেলালউদ্দীন এ প্রসঙ্গে বলেন, আগামী রবিবারের মধ্যে সারাদেশের দোকানপাট, বিপণীবিতান ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়ার প্রন্তুতি নিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে সরকারী ঘোষণা প্রয়োজন। তিনি বলেন, গত বারের মতো এবারও ঈদ বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন, তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। তিনি বলেন, পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ব্যবসায়িক কর্মকান্ড চালিয়ে যাবেন। জীবনের মায়া সবার আছে। ব্যবসায়ীরা অসতর্ক থাকলে করোনায় তাদেরও মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দোকানপাট ও শপিংমলগুলো দ্রুত খুলে দেয়া প্রয়োজন।