ধোপাজান নদীতে টাস্কফোর্সের অভিযানে ২৫টি নৌকা জব্দ

9
সুনামগঞ্জে ধোপাজান নদীতে অভিযানে জব্দকৃত নৌকা সহ অন্যান্য মালামাল।

আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীতে দিনে ও রাতে আবারও বেপরোয়াভাবে শুরু হয়েছে বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলনের মহোৎসব। গত ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১৪টি বালিপাথরবাহী নৌকা আটক এবং ১০ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রায় ৫৬টি নৌকাকে মোবাইল কোর্টের আওতায় আর্থিক জরিমানা আদায়ের পর হঠাৎ করে ধোপাজান নদীর মুখ থেকে পুলিশ ক্যাম্প প্রত্যাহার করার পর এখন প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে বালু পাথর উত্তোলন। বালু পাথর উত্তোলনে এবার ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা ও ড্রেজার মেশিন। সীমান্ত এলাকার জিরো পয়েন্টে সংলগ্ন এলাকায় ডলুরা বিজিবি ক্যাম্প থাকলেও জেলা প্রশাসনের নিষিদ্ধ এলাকায় অবৈধ বালু পাথর উত্তোলনে বিজিবিতো দূরের কথা কেউ দিচ্ছেনা বাধা। জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের অভিযানও হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ধোপাজান চলতি নদীর ভেতরে সীমান্ত সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকা হতে জেলা প্রশাসনের বিধি নিষেধ অমান্য করে চোরাইভাবে অবৈধ পন্থায় বালি পাথর উত্তোলন করে যাচ্ছে সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের কাইয়ারগাঁও, ডলুরা, সুরমা ইউনিয়নের হুরারকান্দা, বালাকান্দা, সাহেবনগর এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের জিনারপর, ভাদেরটেক ও মনিপুরিহাটি গ্রামের বালু পাথর ব্যবসায়ীরা। এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা বিনা বাধায় প্রতিদিন বড় বড় বালু পাথরবাহী বলগেড, ভারী ইঞ্জিন নৌকা দ্রুতবেগে ফিল্মি স্টাইলে নদীতে অনধিকার প্রবেশ করিয়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টার ব্যবধানে বালি ও পাথর বোঝাই করে আবার ধোপাজান নদী হতে বের হয়ে সুরমা নদীতে এসে উজানের দিকে নিরাপদে বের হয়ে যাচ্ছে। ঘটনাগুলো জেনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরান শাহরীয়ার ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরিফ আদনান এর নেতৃত্বে ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার দিনব্যাপী ধোপাজান নদীতে টাস্কফোর্স এর অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিউর রহিম জাদিদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্বজন মোল্লা, অফিসার ইনচার্জ সুরঞ্জিত তালুকদার, সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই আমির হোসেন ও ডলুরা বিওপি কোম্পানী কমান্ডারসহ বিজিবির সদস্যবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে ২৫টি বালি ভর্তি নৌকা আটক করা হয় এবং প্রায় ২০ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়। পাশাপাশি একজনকে দন্ড প্রদান করা হয়। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরান শাহরীয়ার টাস্কফোর্সের অভিযানে আটককৃত ২৫টি নৌকা আজ ২১ এপ্রিল বুধবার সকাল ১০টায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের জিনারপুর বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে নিলাম দেয়া হবে। নিলামে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহীদের আহবান জানিয়েছেন তিনি। এদিকে স্থানীয় জনগণ বলছেন ২০ তারিখে আটককৃত নৌকা ২১ তারিখে অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে নিলাম দেয়া ঠিক হবে না। এগুলো কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় নিয়ে নিলাম দেয়া হলে সরকার উপযুক্ত রাজস্ব লাভে সক্ষম হবে। এছাড়া শুধু নৌকা নিলাম দেয়া নয় অবৈধ বালু পাথর উত্তোলনকারীদেরকে চিনসিত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্যও আহবান জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ। এদিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের টুকেরঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ রাকিবুর রহমান বলেন, টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে আমরা অবগত না হওয়ায় ঐ অভিযানে নৌপুলিশ দল অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, নৌ পুলিশের আইন প্রয়োগের পদ্ধতিকে কাজে লাগালে বালুপাথর উত্তোলন বন্ধ করা যাবে। আমরা নৌকা ধরি। পাশাপাশি বালু পাথর উত্তোলনকারীদেরকে গ্রেফতার করি এবং নৌকা মালিক, চালক ও বালি পাথর উত্তোলনকারী যারাই হউক তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে মামলা দায়ের করি। তাই অবৈধ বালু পাথর উত্তোলন বন্ধে স্থায়ী পদক্ষেপ হিসেবে মালামালসহ নৌকা আটক, আটককৃত বালু পাথরের মালিক শ্রমিকদের গ্রেফতার ও জব্দকৃত বালু পাথরগুলো পর্যাপ্ত সময় নিয়ে নিলাম দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।