বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে অচলাবস্থা

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক এই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যতগুলো বিভাগ আছে, তার সবগুলো বিভাগীয় প্রধানরাও ওপরের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন। লকডাউনে ব্যাংক খোলা রাখা, না রাখা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের খামখেয়ালিপনার ঘটনায় বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কিন্তু সেগুলো নেয় না। হয়তো চাপ থাকার কারণে নিতে পারে না। তার মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চাপমুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাতে অর্থনীতির জন্য ভালো।
নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ কেউ বলছেন, হঠাৎ করেই কাজের ছন্দপতন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। কর্মকর্তারা আগের মতো দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে না, অথবা কাজ করতে পারছে না। সবাই ওপরের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকছেন।
এদিকে কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধের কারণে সবচেয়ে বাজে অবস্থা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে। ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই বিভাগটিতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, লকডাউনের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগটি এখন বন্ধ। এই বিভাগের কোনও কাজ নেই।
প্রসঙ্গত, আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর পরিচালনার ব্যাপারে বা ঋণ শ্রেণিকরণ সংক্রান্ত যে কোনও সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ বা বিআরপিডি থেকে সার্কুলার জারি করে। এরপরই ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একই ধরণের সার্কুলার জারি করত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ। যেমন, গতবছর ব্যাংকের গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে ছাড় দিয়ে তিন দফায় আলাদা আলাদা সার্কুলার জারি করে বিআরপিডি। একইভাবে বিআরপিডির সার্কুলার জারির পরদিনই বা দু-একদিনের মধ্যেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকেও একই ধরণের সার্কুলার জারি করা হয়। কিন্তু গত ২৪ মার্চ বিআরপিডি থেকে ঋণ শ্রেণিকরণ সার্কুলার জারি হলেও আজ পর্যন্ত একই ধরণের কোনও সার্কুলার জারি করতে পারেনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ ।
২৪ মার্চ বিআরপিডির জারি করা সার্কুলারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব মোকাবেলায় খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে আরও এক দফা ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে মেয়াদি ঋণের সুদ পরিশোধ ও বাণিজ্যিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এই সার্কুলারের মধ্য দিয়ে বাড়ানো হয়েছে ঋণের মেয়াদ। ফলে ঋণ পরিশোধের সীমা বেড়েছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি করা হয়েছে ঋণ খেলাপি না করার মেয়াদ। এর মধ্যে তলবি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২১ মাস বেড়েছে। চলমান ঋণের মেয়াদ বেড়েছে ১৫ মাস। চলমান, তলবি ও মেয়াদি ঋণের মার্চ পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তিন মাস।
বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে রয়েছেন মহাব্যবস্থাপক জুলকার নাইন, নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির এবং ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।
এ প্রসঙ্গে সোমবার (১৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, আমরা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের জন্য একই ধরণের সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছি। আশা করা যায়, দু-একদিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে একটি সার্কুলার জারি হবে।
এ বিষয়ে রবিবার(১৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে ব্যাংকের আদলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ সংক্রান্ত কাজ করে। তবে লকডাউনের কারণে ওই বিভাগ বন্ধ রয়েছে। হয়ত সে কারণে নন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ছাড় দেওয়া সংক্রান্ত সার্কুলার নিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তিনি উল্লেখ করেন, কবে নাগাদ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি হবে এটা যেমন বলা যাচ্ছে না, তেমনই এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি হবে না, সেটাও বলা যাচ্ছে না। তবে প্রসঙ্গটি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ করবেন বলে জানান।