কাজিরবাজার ডেস্ক :
অর্থবছরের নয় মাস পেরিয়ে গেলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্ধেক অর্থও খরচ করতে পারেনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। মার্চ পর্যন্ত এডিপির বাস্তবায়ন ৪২ শতাংশের নিচে, যা গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল। পরে তা থেকে কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়ায় ২ লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে মার্চ পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ৮৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হার ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত বছর প্রথম নয় মাসে বাস্তবায়ন হার ছিল ৪৫ শতাংশ। ব্যয় হয়েছিল ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা।
তথ্য মতে, নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত অর্থবছরের (২০১৯-২০) জুলাই-মার্চ সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল ৪৫.০৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৭.২২ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৫.৬৫ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে ৪৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এডিপির অর্থ খরচ হয়েছিল।
এদিকে সংশোধিত এডিপিতে জিওবি (সরকারি কোষাগারের অর্থ) অংশ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য ৬৩ হাজার কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে মার্চ পর্যন্ত জিওবি ৫৫ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য অংশে ২৯ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা এবং সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থ থেকে ২ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মার্চে এডিপিতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ১৩১ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ অর্থ।
সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের গত ৯ মাসে খরচ হয়েছে বরাদ্দের ৪৪ শতাংশ। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩৮ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৫১ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৪৯ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ২০.৯৯ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৫৪.০৩ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩৬.২২ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৪৯.৭৬ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২৭.৯১ শতাংশ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৩৬.৮১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
সবচেয় কম এডিপির অর্থ খরচ হওয়া ১০ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৪.৩৯ শতাংশ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) ১০.৫৯ শতাংশ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ১২.১৭ শতাংশ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ১৪.৯৬ শতাংশ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৮.১৫ শতাংশ, আইন ও বিচার বিভাগ ১৮.৯৩ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ২০.৯৯ শতাংশ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২২.০৯ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ২২.২৪ শতাংশ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২৪.১৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
আরএডিপির অর্থ বরাদ্দে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চলমান প্রকল্পগুলো বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং নতুন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রেও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া এবং সরাসরি করোনা মোকাবিলা ও করোনার আঘাত থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর গ্রাধিকার দেওয়া হয়। এছাড়া এর পাশাপাশি কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, আইসিটি শিক্ষার উন্নয়ন, দারিদ্র্য কমানো এবং প্রকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্পগুলো গুরুত্ব পায়।