ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে থেকে পাথর লুটকালে পানিতে ডুবে শ্রমিকের মৃত্যু

10
কোম্পানীগঞ্জে পাথর তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া জহির আলম।

কোম্পানীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
ভোলাগঞ্জে সংরক্ষিত রোপওয়ে থেকে পাথর লুট করার সময় পানিতে ডুবে জহির আলম (১৭) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। সে জালালাবাদ থানার শিবের বাজার এলাকার মানসীনগর নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর ছেলে। ১৫ এপ্রিল ভোরে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। জহির আলম দয়ার বাজারের জালাল উদ্দীনের কলোনিতে বসবাস করতো। তার সাথে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো রাত ৩ টার দিকে প্রায় একশটি নৌকা ব্যাংকারে পাথর আনতে যায়। তাদের সাথে জহির আলমসহ আমরা ৫ জন একটি নৌকা নিয়ে বাংকার থেকে পাথর আনতে যাই। ব্যাংকারের উত্তর পূর্ব সাইড থেকে পাথর উত্তোলন কালে ভোর ৪টার দিকে ঝড়ের পূর্বাবাস দেখতে পেয়ে তাড়াহুড়ো করে পাথর দিয়ে নৌকা বোঝাই করে ব্যাংকারের তীর থেকে ৫০ গজ দূরে যেতেই ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি। প্রবল কালবৈশাখী ঝড়ে নৌকাটি পানির নিচে তলিয়ে যায়। নৌকায় থাকা বাকি ৪ জন সাঁতার কেটে তীরে উঠলেও জহির আলম তীরে উঠতে সক্ষম হননি। ঝড় থামার পর স্থানীয়রা অনেক খোঁজাখুঁজির পর সকাল ১১ টার দিকে নদী থেকে উদ্ধার করা হয় জহির আলমের লাশ। লাশ উদ্ধারের পর রাসেল সহ স্থানীয় পাথরখেকোরা লাশ গুম করে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা রাস্তা থেকে গাড়ি আটকিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনকে পুঁজি করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল সংরক্ষিত রোপওয়ের দায়িত্বরত আরএনবি সদস্যদের সাথে যোগসাজশ করে প্রায় ১৫ দিন থেকে প্রতি দিনে ও রাতে পাথর লুট করত। সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথরের পাশে এই রোপওয়ের জায়গাটি হওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনার কারনে এতদিন তারা পাথর লোটপাট করতে পারেনি। করোনার কারণে সরকার লকডাউন দেয়ায় সাদা পাথরে পর্যটক শূন্য হয়ে পরে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাথরখেকো চক্রের মূল হোতা রাসেলের নেতৃত্বে চলে বাংকার থেকে পাথর লুটপাট। প্রতিদিন প্রায় একশ থেকে দেড়শ নৌকা করে পাথর লুটপাট করা হতো। ৫০-৮০ ফুটের এসব নৌকা থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদাবাজি করতো রাসেলের নেতৃত্বে মীর হোসেন সহ চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। রাসেল কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর কলাবাড়ি গ্রামের মখলিছুর রহমানের ছেলে। রাসেল উত্তর কলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হলেও দিনের প্রায় অর্ধেকের বেশি সময়ই সে সংরক্ষিত রোপওয়েতে (বাংকার) অবস্থান করে। যে কারণে সে বাংকার রাসেল নামেও এলাকায় পরিচিত। দিনের বেশিরভাগ সময় সে রোপওয়েতে থাকার কারণে সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরএনবি এর সদস্য সহ তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্টতা। স্থানীয় বিজিবির এফএস এর সাথেও রয়েছে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক। যে কারণে সীমান্ত ঘেঁষা রোপওয়েতে তার একক আধিপত্যে চলে। এখানে বাহির থেকে কেউ যেতে চাইলে নিতে হয় তার অনুমতি। এমনকি আরএনবি সদস্যদের সাথে বনিবনা না হলে এখান থেকে ট্রান্সপারও করাতে পারে সে। তার এই কাজের মাঠ বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় পাড়ুয়া উজান পাড়া গ্রামের মূসা মিয়ার ছেলে মীর হোসেন।