প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ॥ ঘরের বাইরে বের হলেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য দ্বিতীয় আঘাত (সেকেন্ড ওয়েভ) মোকাবেলায় বাইরে বের হওয়া মানুষের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রী সভা। মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেছেন, এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট করার জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রী সভা বৈঠকে সকলকে ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক পরার নির্দেশনা দেয়া হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মন্ত্রী সভা বৈঠকে কোভিড নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। সব জায়গা থেকেই আমরা দেখছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আবার একটা প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকদিন থেকে মিটিংয়ে কথাবার্তা বলছেন। সেখানে বিশেষভাবে নজর দিচ্ছেন যে, সবাই যাতে একটু সতর্ক থাকি, বিশেষ করে আমাদের দিক থেকে আমরা যেন সবাই মাস্ক ব্যবহার করি।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, বাকি কী হবে না হবে সেটা তো অনিশ্চিত বিষয়। মাস্ক যদি আমরা সবাই ব্যবহার করি, তাহলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে আসে। সেজন্য মানুষকে আরও বেশি করে সচেতন করতে হবে। অনেকের মধ্যে স্বাভাবিক একটা ভাব দেখা যাচ্ছে। কোনভাবেই পাবলিক প্লেস বা মসজিদ বা ভিড়ের মধ্যে, সামনে দুর্গাপূজা, যেসব অনুষ্ঠান হবে কোন অবস্থায়ই কেউ যেন মাস্ক ছাড়া না আসে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী সভা দৃঢ় ইচ্ছা ও আশা প্রকাশ করেছে যে, সবাই যদি মাস্ক ব্যবহারে সচেতন হয়, তাহলে আমরা এটা থেকে পরিত্রাণ পাব।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা যেন সবাই নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করি। অন্তত যখন বাইরে আসি তখন যেন মাস্ক থাকে। এ বিষয়ে মাঠ প্রশাসনকে কোন নির্দেশনা দেয়া হবে কি-না’ জানতে চাইলে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, রবিবার কমিশনার কনফারেন্স ছিল, সেখানে আমরা পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে আমরা বলে দিয়েছি তারা যেন ইমামদের মাধ্যমে সব মসজিদ থেকে অন্তত জোহর ও মাগরিব নামাজের পর মাইক বা সামনাসামনি নামাজের সময় সচেতন করেন। প্রত্যেকটি মসজিদ, অন্যান্য বাজার বা গণজমায়েত হয়- এমন স্থানে যাতে শ্লোগানের মতো (লেখা) থাকে যে, অনুগ্রহ করে মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করবেন না। সবার কাছে এই অনুরোধ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হবে। রবিবার কমিশনারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাস্ক পরাতে যেভাবে যতটুকু সম্ভব মানুষকে অনুরোধ, উদ্বুদ্ধ করে বা যদি জোর খাটাতে হয়, আইন প্রয়োগ যদি করতে হয় আইন প্রয়োগ করব।
মন্ত্রী সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার কমেছে : কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মন্ত্রী সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার গতবছরের একই সময়ের থেকে ১২ শতাংশ কমেছে। সোমবার মন্ত্রী সভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২০ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রী সভা বৈঠকে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। একইসঙ্গে বৈঠকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রী সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হারের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মন্ত্রী সভা বৈঠক ও গৃহীত সিদ্ধান্তের সংখ্যা ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালে তুলনামূলক বেড়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিরূপ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী সভায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিদ্যমান অগ্রগতির হার ৪৬ শতাংশ, এর আগের বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৫৮ শতাংশ।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, এই বছরের মন্ত্রী সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা ধীর হলেও মন্ত্রী সভা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বাস্তব অবস্থা তো সবাই বুঝতে পেরেছে। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কোভিড-১৯ এর জন্য যে ক্ষতি হয়েছে সেটা যেন খুব দ্রুত আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুনরুদ্ধার করতে পারি।
বর্তমান সরকারের সময়ে গতবছরের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪২৭টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৫৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ৭৩টি।
২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫টি মন্ত্রী সভা বৈঠক হয়েছে। আর গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৩টি মন্ত্রী সভা বৈঠক হয়েছে। ২০১৯ সালে মন্ত্রী সভা বৈঠকে ২৫৮টি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২৩৮টি বাস্তবায়ন হয়েছে, বাস্তবায়নের হার ৯২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রী সভা বৈঠকে ১৬৯টি সিদ্ধান্ত হয়। এরমধ্যে ১১৬টির বাস্তবায়ন হয়েছে, বাস্তবায়নের হার ৬৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭টি আইন জারি করা হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন আছে ৩৩টি। আর নীতি, কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন হয়েছে ১৭টি। এই সময়ে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক চুক্তি, প্রটোকল বা অনুসমর্থন অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৯টি। এছাড়া মন্ত্রী সভার জন্য ২৯৭টি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রী সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের উদ্যোগে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১৫টি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে বলেও মন্ত্রী সভাকে অবহিত করা হয়েছে।