কাজিরবাজার ডেস্ক :
হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতারে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, মামুনুল হককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে হেফাজত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রিসোর্টকাণ্ডের পর থেকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করছেন মামুনুল হক।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, মামুনুল হককে গ্রেফতারের জন্য আমরা গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। অবস্থান শনাক্ত করা গেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। তাকে গ্রেফতারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট কাজ করছে।
এদিকে হেফাজত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানাধীন রয়েল রিসোর্টে নারী সঙ্গীসহ স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হওয়ার পর ছাড়া পেয়ে রাতেই ঢাকায় চলে আসেন তিনি। ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিংয়ের নিজ বাসায় না গিয়ে তিনি পাশেই জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় যান মামুনুল হক। এখন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালের একাধিক মামলাতেও মামুনুল হক এজাহারভুক্ত আসামি।
সূত্র জানায়, মামুনুল হক বুঝতে পেরেছেন মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করতে পারে। এ কারণে পাশেই নিজের বাসা হলেও তিনি সেখানে যাচ্ছেন না। মাদ্রাসার একটি কক্ষে অবস্থান করে মাঝে মধ্যে ফেসবুকে এসে বক্তব্য দিতেন তিনি। তবে সর্বশেষ লাইভে এসে দ্বিতীয় বিয়ের দাবির সপক্ষে স্ত্রীর কাছে সত্য গোপন করার অবকাশ রয়েছে এমন বক্তব্য দিয়ে নিজ দলের আলেম-ওলামাদের কাছে সমালোচনার শিকার হন তিনি। পরে চাপের মুখে সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ডিলিটও করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের মধ্যম সারির এক নেতা জানান, রিসোর্টের ঘটনার পর একাধিকবার বক্তব্য দিতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মামুনুল হক। এজন্য দলের সিনিয়র নেতারা তাকে আপাতত মুখ বন্ধ রাখতে বলেছেন। এ কারণেই মামুনুল হক চুপ করে আছেন। এরমধ্যে কাপাসিয়ার এক নারীকে তৃতীয় বিয়ের দাবি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আরও বেশি চুপসে গিয়েছেন তিনি।
হেফাজতের ওই নেতা বলেন, মামুনুল হক ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করার দাবি করলেও স্ত্রী ও পরিবারের কাছে তা গোপন করেছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর দাবির সময় তিনি তৃতীয় স্ত্রী সম্পর্কে কিছু বলেননি। এখন তার তৃতীয় স্ত্রীর সম্পর্কে খবর বের হয়েছে। তাকেও তিনি শরিয়ত মোতাবেক বিয়ের দাবি করছেন। কিন্তু সামাজিকভাবে এসব কর্মকাণ্ড তার প্রতি নেতিবাচক একটি ধারণা তৈরি করেছে। যা তার করা একেবারেই উচিত হয়নি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে হেফাজতের নেতাদের একে একে গ্রেফতার শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুফতি শাখাওয়াত হোসেন রাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, মুফতি বশির উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, হেফাজতের মধ্যম সারির প্রায় সব নেতাকে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদেরই গ্রেফতার করা হবে। কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। মধ্যম সারির নেতাদের গ্রেফতারের পর মামুনুল হকসহ কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হতে পারে। গ্রেফতারের পর যাতে হেফাজত নতুন করে মাঠে নামতে না পারে এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নজরদারি ও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ইতোমধ্যে সারাদেশের যেসব এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের আধিপত্য রয়েছে এমন এলাকা চিহ্নিত করেছেন। এসব এলাকায় থানাসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে হেফাজত নতুন করে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে তাদের শক্ত হাতে দমন করার বিশেষ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।