করোনার থাবা পড়েছে বইমেলায়ও। আপামর বাঙালির প্রাণপ্রিয় অমর একুশে বইমেলা এবার যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে। সকলের সুরক্ষার নিমিত্ত সবার মুখে মাস্ক পরাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার শর্তে বইমেলা হতে পারেনি ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারিতে। পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে তা পিছিয়ে আনা হয় স্বাধীনতার মাস মার্চে। প্রকাশক গোষ্ঠীসহ দেশের সৃজনশীল লেখকদের কথা চিন্তা করে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা শুরু হয় ১৮ মার্চ। তবে কিছুদিন না যেতেই ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বইমেলা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আক্রমণে। স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ বইমেলার সময়সূচীও জনসমাগমের জন্য তেমন অনুকূল নয়। অনেক বইয়ের দোকানের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হতে পারেনি এখনও। অনেক বই পরিপাটি মুদ্রিত হয়ে বইমেলায় আসতেও পারেনি। বেচা-বিক্রিও শুরু হয়নি তেমন।
বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা এবার যথাসময়ে হতে পারেনি করোনা মহামারী সংক্রমণের কারণে। গত শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তথা সংক্রমণসহ মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার নিমিত্ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমি ভার্চুয়াল বইমেলার আয়োজনের চিন্তাভাবনা করলেও আপত্তি উঠেছে। বলাবাহুল্য, দেশের প্রকাশক গোষ্ঠী সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন অমর একুশে বইমেলার। দেশে সৃজনশীল সাহিত্য ও মননশীল বিকাশের এটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। কয়েক শ’ প্রকাশকের কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়ে থাকে বইমেলায়। সেক্ষেত্রে বইমেলা আদৌ অনুষ্ঠিত না হলে অথবা আংশিক হলে সমূহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন প্রকাশকরা। সৃজনশীল কবি-লেখকরা বঞ্চিত হবেন তাদের বইয়ের প্রকাশ থেকে। বই বিক্রি এবং স্টল বরাদ্দ বাংলা একাডেমির বার্ষিক আয়েরও অন্যতম একটি উৎস। অমর একুশে ও ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে যে স্বতঃস্ফূর্ত বইমেলার সূচনা এবং বিবর্তন, তা এক কথায় প্রশংসনীয় নিঃসন্দেহে। বাঙালীর গৌরবও বটে। কেননা, একে ঘিরে গল্প-কবিতা-উপন্যাস-প্রবন্ধ-শিশুসাহিত্যসহ সৃজনশীল লেখনী শিল্প ও প্রকাশনা শিল্পের সুবিশাল এক কর্মযজ্ঞ শুরু হয় দেশে, যার অর্থনৈতিক ব্যাপ্তি ও পরিধি কম নয়।