বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক এক নতুন মাত্রা পেয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে। এক বছর আগে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর এটাই ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর। এই সফরে দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে নতুন পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের। আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে বহুমুখী যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সফরে শুক্রবার ঢাকায় এসেছিলেন। এ বছর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেরও পঞ্চাশ বছর পূর্তি হয়েছে। যদিও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল, তবু গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ই দুই নেতার মধ্যকার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। স্বাক্ষরিত পাঁচটি সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অভিযোজন ও প্রশমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা; বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর অব ইন্ডিয়ার মধ্যে সহযোগিতা; বাণিজ্য বিকাশে অশুল্ক বাধা দূর করতে একটি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা; বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের জন্য তথ্য-প্রযুক্তি সরঞ্জাম, কোর্সওয়্যার ও রেফারেন্স বই সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ সহযোগিতা এবং রাজশাহী কলেজ মাঠের উন্নয়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন। এ সময় শিলাইদহের কুঠিবাড়ীর বর্ধিত সংস্কারকাজ, ঢাকা এবং নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা এবং তিনটি সীমান্ত হাটের উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ভারতীয় শহীদ সদস্যদের স্মরণে আশুগঞ্জে একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘পাওয়ার ইভাকুয়েশন ফ্যাসিলিটিজ’ নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ভারতের উপহারের ১২ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা এবং ১০৯টি অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সহযোগিতার এই সম্পর্ক দুই দেশকেই এগিয়ে নিচ্ছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো বেশি গতি পাক।