যথাযোগ্য মর্যাদায় সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস পালিত

17

একে কুদরত পাশা সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে রবিবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাধীন ডলুরা শহীদ সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।
এ সময় শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণকালে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোকছুদ আলী; বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান; বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা; জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ; সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ আদনান; উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সীমা রাণী বিশ্বাস; জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার জহিরুল আলম; সহ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।
১৯৭১ সনের ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে মুক্ত হয় সুনামগঞ্জ শহর। হাওরের নৌপথে ও সড়কপথে সিলেটের দিকে পালিয়ে যায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। এ, বি, সি ও ডি কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি অভিযানে শহর শত্রুমুক্ত হওয়ায় স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় দিন অতিবাহিত করা জনতা রাস্তায় নেমে এসে জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানান। জয় বাংলা শ্লোগানে তখন মুখর হয়ে ওঠে শহর। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখি আক্রমণের খবর পেয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দক্ষিণের সড়ক ও হাওরপথে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা জানান, দক্ষিণ দিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পালানোর পথ রেখে বালাট সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ শহরকে শত্রুমুক্ত করতে উদ্যোগ নেন।
চারটি কোম্পানির ‘এ’ কোম্পানিকে যোগীরগাঁও, ‘বি’ কোম্পানিকে হালুয়ারঘাট, সি কোম্পানিকে হাছননগর, ডি কোম্পানিকে ভাদেরটেক লালপুর থেকে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তাছাড়া এফ কোম্পানিকে বেরীগাঁও-কৃষ্ণনগরে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়। শুধু দক্ষিণ দিক উন্মুক্ত রেখে যৌথ আক্রমণে নামেন মুক্তিযোদ্ধারা। কোম্পানিগুলোকে সার্বিক রসদ সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয় এডিএম কোম্পানিকে। এছাড়াও বনগাঁও সদর দফতরে অতিরিক্ত এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা প্রস্তুত ছিলেন যে কোন পরিস্থিতি শামাল দিতে।
মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত ও যৌথ আক্রমণের খবরে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর ভোরেই মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে রাস্তায় নেমে আসে দামাল মুক্তিসেনাদের অভিনন্দন জানায়। দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকার পর হাজার হাজার নারী পুরুষ রাস্তায় নেমে এসে মুক্তির উল্লাসে মেতে ওঠেন। এভাবেই শত্রুমুক্ত হয় সুনামগঞ্জ। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পালানোর সময় সুনামগঞ্জ পিটিআই টর্চার সেলে কয়েকজনকে হত্যা করে, কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে আহসানমারা সেতুর পাশে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক মানুষের হাড়গোড়, নারীদের কাপড় চোপড়সহ বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার করেন।