একে কুদরত পাশা সুনামগঞ্জ থেকে :
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দেড়মাস অতিক্রান্ত হলেও শুরু হচ্ছে না কাজ। বুধবার হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি ও জামালগঞ্জ উপজেলা কমিটির উদ্যোগে হাওরের বাঁধ পরিদর্শন করতে গিয়ে হাওরের কোথায় বাঁধ হচ্ছে তা খুঁেজ পাওয়া যাচ্ছে না। এবারও কলমে মাটি কাটবে কি না সন্দেহ করছেন হাওর নেতারা।
জামালগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে শুরু করে চানপুর, রামপুর, মান্নানঘাট, সেলিমগঞ্জ, গজারিয়া হয়ে হাওরের কোথায়ও বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে তা পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ জামালগঞ্জ দিরাই সিমান্তে পাকনার হাওরের খোঁজ মিলে বাঁধের কাজের।
দুপুরে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, জামালগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি শাহানা আল-আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এম আল আমিন, সদস্য জসিম উদ্দিন সহ পাকনার হাওর উপ-প্রকল্পের কি:মি: ২৭.৯৭৫ হতে কি:মি: ২৯.৩৫৮ ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত কাজের পিআইসি নং ৯ এ গিয়ে দেখা যায়, গাড়ি দিয়ে বাঁধে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। উক্ত প্রকল্পের সভাপতি প্রণব তালুকদার ও সদস্য সচিব বিধাংশু তালুকদার, সদস্য প্রবীর পুরকায়স্থ, প্রদীপ রায়, পরিতোষ সরকার কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রকল্প এলাকায় একটি খাতা পাওয়া গেছে তাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, পওর শাখা-১, জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এর ১০ জানুয়ারির তারিখের একটি প্রিন্ট কার্যাদেশ পাওয়া যায়। তবে সে কার্যাদেশে কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিকের নাম পদবী লিখা থাকলেও তাদের স্বাক্ষর নেই।
আলীপুর জামালগঞ্জ অংশ থেকে নতুন জগন্নাথপুর পর্যন্ত বাঁধ পরিদর্শন করে দেখা যায়, গত বারের বাঁধ অক্ষত আছে সে বাঁধের উপর এক থেকে দেড় ফুট মাটি ভরাট করা হচ্ছে। এতেই শেষ হচ্ছে নিয়ম রক্ষার বাঁধের কাজ। তবে বাঁধ এলাকায় তুলনামূলক নিচু এলাকায় এখনো মাটি ভরাট করা হচ্ছে না। হাওর বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কৃষকরা। তারা জানান, ফাল্গুন মাস আসলে তড়িগড়ি করে বাঁধের কাজ শুরু করা হয়। পিআইসির লোকেরা ইচ্ছেমত কাজ করেন। না বাঁধে দুর্মুজ করা হয় না ঘাষ লাগানো হয়। বড় বড় চাকা মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরী করায় বৈশাখ মাসে মানুষের কাজ করতে অসুবিধা হয়।
দিরাই উপজেলার কালিয়াকোটা হাওর উপ-প্রকল্পে গিয়ে বাঁধের বেহাল অবস্থা দেখতে হয়। ভাটিপাড়া রফিনগর ইউনিয়নের কোন বাঁধে এখনো কাজ শুরু হয়নি। কালিয়াকোটা হাওর উপ-প্রকল্পের কি:মি: ২০.০৯২ হতে কি:মি: ২০.০৩৭ কি:মি: ২০.৭৪৩ হতে কি:মি: ২১৪৪০ এর পিআইস নং ৭৫ এ গিয়ে দেখা যায় গাড়ি দিয়ে বাঁধে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। বাঁধ এলাকায় কোন সাইনবোর্ড নেই। মাটি ভরাট শ্রিমিকরা জানান হানিফ নামে একজন তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। দিরাই উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের হানিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি পিআইসির কেউ নই। আমি মাটির কাজ করি। পিআইসির সভাপতির সাথে আমার চুক্তি হয়েছে আমি যতটুকু মাটি ভরাট করবো তা প্রতি হাজার মাটির মূল্যবাবদ আমাকে ৪ হাজার ৫শ টাকা দেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা ওয়েভ পোর্টাল থেকে তথ্য নিয়ে দেখা যায় এ বাঁধে বরাদ্দ রয়েছে ১২ লক্ষ ১১ হাজার ৯শ ৮৪ টাকা। পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন সুদিন কুমার সরকার। তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি সাইনবোর্ড নেওয়ার জন্য দিরাই এসেছি। সাইটে কাজ চলছে।
সঠিক সময়ে বাঁধের কাজ শুরু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন নেতৃবৃন্দ। তারা জানান, সঠিক সময়ে কাজ শুরু করার জন্য আমরা মানববন্ধন করে দাবি জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দাবিকে আমলে না নিয়ে কৃষকের সাথে তামাশা শুরু করেছে। এবার যদি হাওরের কোন ক্ষতি হয় তাহলে এর দায় জেলা প্রশাসক ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিতে হবে। আমরা অচিরেই কাজ শুরুর জন্য নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করবো।
তারা বলেন, কাজ সঠিক সময়ে শুরু না করাও একটা দুর্নীতি। পিআইসির লোকরা অপেক্ষায় আছেন আবহাওয়া ভালো থাকলে নামে মাত্র কাজ করে বরাদ্দ আত্মসাতের জন্য। আমরা সে সুযোগ দেবনা। সুনামগঞ্জের কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন জোরদার করা হবে।