কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার কথা আলোচনা হচ্ছিল বেশ কয়েক মাস আগে থেকে। কিন্তু জামায়াত নিজেই এড়িয়ে চলছে জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপিকে। স্বাধীনতাবিরোধী দলটি বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে ‘একলা চলো’ নীতিতে। তাই বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনগুলোতে বিএনপিকে সঙ্গ দেয়নি দলটি। কেন্দ্রীয়ভাবে এবং স্থানীয়ভাবে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বেশ কিছু উপনির্বাচনে বিএনপিকে সহায়তা করতে রাজি হননি দলটির নেতারা। স্থানীয়ভাবে উপনির্বাচনে থাকা প্রার্থীরা জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সাড়া পাননি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত ছাড়া তাদের কিছু করার নেই বলে স্থানীয় জামায়াত নেতারা সাফ জানিয়ে দেন বিএনপির প্রার্থীদের। এমনকি ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতেও অনীহা প্রকাশ করেছেন জামায়াতের স্থানীয় নেতারা। জামায়াত ও বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সম্প্রতি ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে জামায়াতকে মাঠে কাজে লাগাতে চেয়েও পায়নি বিএনপি। এ ব্যাপারে ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক আমান উল্লাহ বলেন, ‘জামায়াতকে পাইনি এটা সত্য, তবে তাদের সঙ্গে আমরা সেই রকম যোগাযোগও করিনি। দলটির স্থানীয় অনেক নেতার সমর্থন ছিল আমাদের প্রার্থীর প্রতি। তবে নির্বাচনী কাজে কোনো সহায়তা তারা করেনি। কিছু ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের ভালো বোঝাপড়া ছিল এটা বলা যায়।’
২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জামায়াত এখনো ২০ দলীয় জোটে আছে। তাদের ছেড়ে দেওয়া বা বোঝাপড়ায় রাখার কোনো উপলক্ষ আপাতত তৈরি হয়নি। তাছাড়া জোটের কোনো কর্মসূচিও আপাতত নেই, তাই তাদের দেখাও যায় না। কর্মসূচি হলে অবশ্যই তারা অংশ নেবে। জোট এখন পর্যন্ত অটুট আছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।’
জোটে থাকা না থাকা নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রতিদিনের সংবাদ বলেন, ‘জোটে থাকা না থাকার বিষয়ে কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নিও।’ তিনি আরো বলেন, ‘জোটের বিষয়ে আলোচনা হলে সেটি জোটের বৈঠকেই হওয়ার কথা। কিন্তু ২০ দলীয় জোট এখনো অটুট আছে।’
দলীয় সূত্র মতে, বিএনপির ‘জামায়াতপ্রেমী’ হিসেবে পরিচিত বেশির ভাগ নেতা সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন জামায়াতের দিক থেকে। বিএনপির অপেক্ষাকৃত উদারমনা নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে জামায়াতকে বাদ দিতে চাপ দিয়ে আসছেন কিন্তু দলের রক্ষণশীল বিশেষ করে ‘জামায়াতপ্রেমী’ কিছু নেতার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলে অনেকের অভিযোগ। ভোটের হিসাবটাও জামায়াতকে না ছাড়ার অন্যতম কারণ বলে ধরা হয়। তবে জামায়াতকে জোটে রাখার ব্যাপারে একটি সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল বিএনপিপ্রধানের। মূলত তার কারণেই জোট থেকে বাদ দেওয়া যাচ্ছিল না দলটিকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন বিএনপি চেয়ারপারসনই চাচ্ছেন জামায়াতকে আপাতত দূরে সরিয়ে রাখতে। তবে জোট থেকে সরালেও জামায়াতের সঙ্গে বোঝাপড়া চালিয়ে যেতে চায় বিএনপি। এ ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে।
এদিকে জামায়াতের একটি সূত্রে জানা যায়, যেকোনো ধরনের বোঝাপড়ার জন্য তারা খালেদা জিয়ার বাইরে কাউকে আগেও বিশ্বাস করেনি ভবিষ্যতেও করবে না।
অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে বোঝাপড়া থাকা না থাকা নিয়ে জামায়াতেও দুই ধরনের মত আছে। একটি অংশ চাচ্ছে জোট থেকে বাদ দিলে তারা ‘একলা চলো’ নীতি নিয়ে চলতে। আবার জামায়াতের আরেক অংশের নেতারা চান বিএনপির সঙ্গে একটি স্বাভাবিক বোঝাপড়া চালমান রাখতে। দেশে ‘স্বাভাবিক রাজনীতি’ ফেরার পর তারা আবার পুরনো ঐক্যে ফিরে যাবে।
এ বিষয়ে জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের এক নেতা বলেন, বিএনপি যদি জামায়াতকে ছেড়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলসহ দেশের প্রগতিশীল ধারার দলগুলোকে কাছে টানতে পারে তাহলে তাতে জামায়াতের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। গতবার যে মডেলে নির্বাচন হয়েছে সামনেও একই মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে। ওই নেতা জানান, স্থানীয় ভোটের মাঠে জামায়াত নেই। তিনি বলেন, জামায়াত আপাতত সব ধরনের নির্বাচনী রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকতে চায়। গত সিটি নির্বাচনের আগেই তারা এ বিষয়টি বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে। তাই জামায়াতের স্থানীয় নেতারাও কোনো ধরনের নির্বাচনী কাজে থাকছেন না। তবে ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে বরাবরের মতোই মাঠে থাকতে প্রস্তুত জামায়াত। জোটে থেকেও ভোটে না থাকার যৌক্তিকতা কতটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জোট আছে এ হিসাব আপাতত করছে না জামায়াত।’