দেশ ঘুরে দাঁড়াতে চায়

7

কোভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত জাতীয় অর্থনীতির সমূহ ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আশাবাদের একটা জায়গা এই যে, গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছিল। করোনা মহামারীর কারণে তা নেমে গিয়েছে ৫ দশমিক ২০ শতাংশে। অবশ্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এডিবির প্রাক্কলন ছিল আরও কম। তবু দেশে ধান-চাল বিশেষ করে বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং সরকারের গতিশীল আর্থিক নীতিসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণে নগদ প্রণোদনা ও আনুষঙ্গিক সহায়তা প্রদানের ফলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামীতে দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারসহ জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার প্রস্তুত করেছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তনে। রফতানিমুখী, শিল্প স্থাপনসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বারোপ। এই সমন্বিত পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান, যার মধ্যে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রবাসে। মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৫ লাখ কোটি টাকা। করোনা মহামারী মোকাবেলাসহ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নেয়া হযেছে ২৪৪টি উন্নয়ন কৌশল।
ইতোপূর্বে কোভিড-১৯ মহামারীজনিত দীর্ঘ লকডাউন ও শাটডাউনে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ মন্দা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তাতে বিশ্বের প্রায় সব দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ঋণাত্মক হবে বলেও বলা হয়েছে, যা অসঙ্গত নয়। বিশ্বব্যাংকের মতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে ভয়াবহ মন্দাবস্থায় পড়েছে। এর ফলে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি সঙ্কুচিত হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বৈশ্বিক মাথাপিছু আয়ে যে হ্রাস দেখা দেবে তা হবে ১৮৭০ সালের পর সর্বোচ্চ। একটানা ৬৬ দিন লকডাউনে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। এর পাশাপাশি আশা ও আশ্বাসের বাণীও শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০২১ সালেই বৈশ্বিক জিডিপি ঘুরে দাঁড়াবে। তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
তবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। করোনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গড় জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ঠিক রেখে এবার প্রণয়ন করা হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কা অমূলক হলেও হতে পারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। দেশে প্রবাসী আয় তথা রেমিটেন্স ও রিজার্ভের ক্ষেত্রে তীব্র আশার সঞ্চার হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মন্দাবস্থা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হবে না। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এরই প্রতিফলন ঘটেছে।