বাংলাদেশের সীমান্ত তিন দিকে ঘেরা ভারত তাই বাংলাদেশ ভারতের উভয় সীমান্ত এলাকায় জন-সাধারণের বসতি রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত ভারতের বিএসএফের গুলির আঘাতে বাঙালি নিরস্ত্র মানুষকে পাখির মত মরতে হচ্ছে। এর প্রতিবাদ বিজিবি করে থাকলে ও তার কোনো ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। উভয় সীমান্তে জন-বসতি থাকার ফলে অনায়াসে গরু-ছাগল চড়াতে গেলে বাংলাদেশী নাগরিকদের পালিত গরু-ছাগল ফিরিয়ে আনতে বা সীমান্ত বরাবরে গেলেই বিএসএফের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়। এ ছাড়া সীমান্তিক এলাকার জন-সাধারণ বেকারত্বে ভুগতে হয় বেশী, তাই সময় কাটানোর জন্যে অনেকে সীমান্ত বরাবরে হাঁটাহাঁটি করলে বিএসএফের উগ্র স্বভাবের কারণে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাতে হয়। বাংলাদেশের উচিত সীমান্তিক এলাকায় সাধারন মানুষের কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা করা।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময়ে র্যাডক্লিফ এর বিভক্তকরণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, ফলে বিশ্বের সবচেয়ে রক্তাক্ত সীমান্তে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। প্রতিনিয়ত সীমান্তে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, যা যুদ্ধাপরাধের সমান। এককালে উভয় সীমান্তের মানুষ আত্মীয়তার বন্ধনে বসবাস করত; র্যাডক্লিফের সীমান্ত নির্ধারণের কারণে বিভক্ত হয়ে পড়তে হয়েছে। এখন চোরাচালানীর দোহাই দিয়ে ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারিরা বাংলার নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করছে, যা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী নিরস্ত্র কাউকে হত্যা করার কোনো অধিকার নেই। এসব হত্যা কান্ড প্রতিকারের জন্য জাতিসংঘের দৃষ্টি কামনা করা উচিত বলে অনেকে মনে করেন।
সীমান্তে হত্যা বন্ধে বার-বার বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হলে ও কোনো ভাবে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। গত জানুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত র্যাডক্লিফ’র লাইনের পাশে বিএসএফের গুলিতে কমপক্ষে ৩৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন, এবং ৬ জনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, ২২ জন আহত হয়েছেন, ২২জন অপহৃত হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানটি আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর সূত্রে ২০১৮ সালে ১৮ জন, ২০১৯ সালে ৪৩ জন খুন হন। এ ব্যাপারে বিজিবি কতৃপক্ষ তীব্র প্রতিবাদ করলে ও বিএসএফ কর্তৃপক্ষ কার্যকারি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
এদিকে বিজিবির মহাপরিচালক বিজিবি দিবস উপলক্ষে বলেছেন, সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারলে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। কথাটি বাস্তবভিত্তিক বলেছেন, কারন সীমান্তিক এলাকায় এখনও পর্যন্ত কোনো ধরনের কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে পাশের দেশে পাড়ি জমাতে পারে, তাই যে ভাবে হউক সীমান্তিক এলাকায় সাধারণ মানুষের জন্যে কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থার বিকল্প নেই।