কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভাঙ্গা ঘরের মেঝেতে বসে গল্প করছিলেন পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ তিন মহিলা স্নেহলতা দাস, কমলা রানী দাস আর সুনীতি রানী দাস। এক এক করে শুনাচ্ছিলেন নিজের দুর্দশার কথা। সুরমা নদী ভাঙ্গন বাড়তে বাড়তে এখন তাদের বসত ঘরের ভেতরে এসে হানা দিয়েছে। ঘরের অর্ধেক অংশ ভেঙ্গে ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েগেছে। এখন বাকিটুকুও বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়। বিল্ডিং ঘরের পাকা মেঝেতে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল।
অনেক কষ্টে উপার্জিত টাকায় বানানো নিজের এই ঘরে এখন আর কেউই থাকছেন না ভয়ে। বসতঘর, ভিটেমাটি হারানোর প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছেন তারা। ঘরের চালার টিনসেড, মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। লাগোয়া আর কয়েকটি ঘর ছিলো। সেগুলিও মাস দুয়েক আগে গ্রাস করে ফেলেছে সুরমা নদী। এবার এইটুকুও গ্রাস করার বাকি। চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত দেখছেন নিজেদের ঘর ভাঙ্গার দৃশ্য! স্বপ্নের সাজানো ঘর নিমিষেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীর জলে। এখন তারা কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন আর কেইবা তাদের আশ্রয় দেবে তার কোনো ভরশা পাচ্ছেন না কেউই! খোলা আকাশের নিচে বসে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে সবার।
যে-ই তাদের দুর্দশা দেখতে আসে সবাই বলে এখান থেকে ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাও, কিন্তু থাকার জায়গা দেয়না কেউ! শুধু পূর্ব মাছিমপুরের এই তিন মহিলার পরিবারই নয়, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাছিমপুর, পশ্চিম মাছিমপুর, নৈনগাঁও, মাঝের গাঁও, মুরাদপুর এবং মংলার গাওয়ের প্রায় শতাধিক পরিবার সুরমা নদীতে নিজেদের বসতঘর, ভিটেমাটি, ফসলিজমি ও গাছগাছালি হারিয়ে এখন বেছে নিয়েছে উদ্বাস্তুর জীবন। সুরমা নদীর করালগ্রাসে ভেঙ্গে চুরমার হয়েগেছে এসব পরিবারের সাজানো স্বপ্নের ঘর-সংসার।
ভিটেমাটি হারিয়ে ভূমি না পেয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পরিত্যক্ত বৃটিশ সড়কে। সন্তান সন্ততি নিয়ে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক, সরকারের কাছে এমনটাই দাবি নদী ভাঙ্গনে উদ্বাস্তু ভূমিহীন এসব অসহায় পরিবারের। দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল বারী জানান, দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নটি উপজেলা সদরের ভেতরে পড়েছে। এই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মাছিমপুর, পশ্চিম মাছিমপুর, নৈনগাঁও, মাঝের গাঁও, মুরাদপুর এবং মংলার গাওয়ের অবস্থা পূর্ব থেকেই খারাপ। নদী ভাঙ্গনে এই গ্রামগুলির প্রায় সিংহভাগই এখন বিলীন হয়েগেছে। প্রায় শতাধিক পরিবার বাস্তুভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিয়েছে।
তারা পুনর্বাসন ও আশ্রয়ের দাবি জানিয়েছে। আমাদের কাছে ভূমিহীনদের জন্য সরকারি ঘরের বরাদ্দ পর্যাপ্ত সংখ্যক আছে। কিন্তু ঘর প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালার জটিলতার দরুণ ঘর দেওয়া যাচ্ছেনা।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গন কবলিত এই কয়েকটি গ্রামের অবস্থা খুবই করুণ। যাদের ঘর নেই কিন্তু খাসজমিতে বসবাস করে আসছে তাদেরকে খাসজমি বন্দোবস্তসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা সদরের এক কিলোমিটারের মধ্যে খাসজমি বন্দোবস্ত করার নিয়ম না থাকায় সদর ইউনিয়নের ক্ষতগ্রস্ত কয়েকটি গ্রামের মানুষজনকে ঘর দেওয়া যাচ্ছে না। সদরের বাইরে ঘর নির্মাণ উপযোগী খাসজমি পাওয়া গেলে সেখানে তাদেরকে খাসজমি বন্দোবস্তসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।