মৌলবাদীদের আস্ফালন রুখতে হবে

13

স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির গর্ব এবং অহঙ্কার বিজয়ের মাসে চরম দুঃসাহস দেখিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে রাতের আঁধারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের নির্মীয়মাণ ভাস্কর্য ভাংচুর করেছে দেশবিরোধীরা। শুধু এটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় একটি গাড়িতে ভাস্কর্যের সামনে এসে ফাঁকা গুলি করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল তিনটি প্রধান সড়কের দিকে মুখ করে। নিচের দিকে থাকার কথা জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল। কাজ শুরু হয়েছে ৭ নভেম্বর থেকে যশোরের ভাস্করশিল্পী মাহবুব জামালের অধীনে। মজমপুরের দিকে মুখ করে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার একটি ভাস্কর্য তৈরির কাজ ছিল প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা রয়েছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে। দুর্বৃত্তদের দ্বারা ভাস্কর্যটি ভেঙ্গে দেয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-ছাত্রলীগ প্রতিবাদ মিছিল করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য জেলায় সংঘটিত হয়েছে প্রতিবাদ মিছিল, মানববন্ধন ইত্যাদি। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে থানায়। তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকজন মাদ্রাসা ছাত্রকে। ইন্ধনদাতার পরিচয়ও মিলেছে। ভাংচুরের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী করা হয়েছে জামায়াত-হেফাজতকে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে রাজধানীর দোলাইরপাড়ে প্রস্তাবিত ও নির্মীয়মাণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের প্রথম বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর এর নেতৃত্বের পদ দখল করে জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা, যার পেছনে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তারাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ এবং তা অপসারণের হুমকি দিয়ে মাঠ গরম তথা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। সরকার ও আওয়ামী লীগ অবশ্য কারও সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভাস্কর্য সম্পর্কিত বিতর্কের অবসান চেয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুসহ সব রকম ভাস্কর্যবিরোধী ঘৃণ্য মৌলবাদী দেশবিরোধী এই অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াতে হবে এখনই। হিংস্র এই বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে অবশ্যই।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা প্রদান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছে ওই চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। এই দুঃসাহস তারা পায় কোথায়? ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে এবং তা ভাঙ্গার দুঃসাহসের অপপ্রয়াস চালানোর মাধ্যমে এরা পরমধর্মসহিষ্ণু বাঙালির হাজার বছরের সুনাম নষ্ট করে নতুন প্রজন্মের স্বাভাবিক বিকাশের পথে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এরা জেনে বুঝেই বিষয়টিকে ধর্মরক্ষার তকমা পরাতে চাইছে। অর্থাৎ, তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরই চর্চা করছে এবং একই সঙ্গে ধর্মের লালিত বাণীকে অস্বীকার করে অধর্মের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চাইছে। সবচেয়ে বড় কথা, এরা দেশে বিভেদ তৈরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে নৈরাজ্য কায়েম করতে চাইছে। তাদের দুঃসাহস সীমা লঙ্ঘন করে চলেছে। তাই এদেরকে সর্বশক্তি দিয়ে রুখতে হবে এখনই। দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্যে বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।