সিলেটে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ে পুরস্কার পেল ১২ শিক্ষার্থী

9

সিলেটে ইনোভেটর’র আয়োজনে ‘জেলা পরিষদ বইপড়া উৎসবের’ পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার বিকালে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এবারের বইপড়া উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়তে দেওয়া হয়। পরে পরীক্ষায় ১১ জনকে পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এছাড়া বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে একজনকে।
ইনোভেটরের মুখ্য সঞ্চালক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব কবি কামাল চৌধুরী। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি, বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনোভেটরের নির্বাহী সঞ্চালক প্রণবকান্তি দেব।
সংগীত শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, প্রতীক এন্দ টনি এবং ইনোভেটর সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম অনির পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত এর মাধ্যমে শুরু হয় সমাপনী অনুষ্ঠানের।
ইনোভেটর সদস্য ঈশিতা ঘোষ চৌধুরী এবং সৈয়দা আছিয়া খাতুনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে ড. কামাল চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে বই। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আর্দশকে হৃদয়ে লালন করতে হলে তাঁর মহাজীবন পাঠের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন-সংগ্রামকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ইনোভেটরের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পাঠোৎসবের আয়োজন এক যুগান্তকারী ঘটনা।
কামাল চৌধুরী আরো বলেন, পঠন-পাঠন ছাড়া তারুণ্যের মনোজগতের বিকাশ সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানার কোনো বিকল্প নেই।
বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, শেখ মুজিব আর বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্ত্বা। মুজিব জীবনের নিবিড় পাঠ ছাড়া তাঁকে ভালোবাসা যায় না।
তিনি বলেন, মুজিবের রচনাগুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ। তরুণদের সেই মুজিব জীবন সমুদ্রকে সততা, নিষ্ঠা এবং অধ্যাবসায়ের সাথে জানতে হবে। সেজন্য পড়াশোনার, গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার তাঁর বক্তব্যে মুজিব বর্ষে সিলেট জেলা পরিষদের সহযোগিতায় ইনোভেটরের বইপড়ার আয়োজনকে ‘অনন্য’ আখ্যা দিয়ে বলেন, জাতির পিতাকে অধ্যয়ন ছাড়া কোনো শিক্ষা পূর্ণতা পায় না। সবাইকে মুজিব আদর্শ চর্চা করতে হবে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে।
আলোচনা শেষে এ বছরের বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণ পর্ব সঞ্চালন করেন ইনোভেটরের প্রধান সমন্বয়কারী প্রভাষক সুমন রায়। এসময় স্কুল পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ পাঠক গোয়ালাবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সঞ্চিতা দাশ আখিঁ, সেরা পাঠক সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুলতানা জামান ছাজিম, ব্লু বার্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মুসতারি আহমেদ ইফতি, হযরত শাহজালাল ডি ওয়াই কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মানসুরা সিদ্দিকা, এইডেড হাই স্কুলের শিক্ষার্থী আহবাবুর রহমান এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ পাঠক স্কলার্স হোম শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী তাসফিয়া চৌধুরী, সেরা পাঠক মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেটের শিক্ষার্থী দেবাঞ্জন দেব রাতুল ও প্রীতিরাজ বণিক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৌসুমি রানী রায়, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার অর্ণা, বি এ এফ শাহীন কলেজ, শমসেরনগরের শিক্ষার্থী হাদী হোসেন মাহীর হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এ ছাড়া এ গ্রীণ ডিজেবল ফাউন্ডেশন এর শিক্ষার্থী তাবাসসুম ফেরদৌসী চাঁদনীকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে ক্রেস্ট, সনদপত্র, মেডেল এবং বই প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণপর্ব সমন্বয় করেন ইনোভেটরের সমন্বয়ক সুমিতা দাশ, সদস্য প্লপা চৌধুরী, নিহাম মতিন, বদরুল ইসলাম শাকির প্রমুখ।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হওয়া বইপড়া উৎসবের এ আসরে ১ হাজার ৬ জন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পাঠে অংশ নিয়েছিল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এ বই থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ইনোভেটর ২০০৬ সাল থেকে তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার প্রত্যয়ে বইপড়া উৎসবের আয়োজন করে আসছে। বিজ্ঞপ্তি