বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আজকের দিনটি দিয়ে শুরু হয়েছিল বাঙালি জাতির দীর্ঘ নয় মাসের রক্ত ঝরানো দিন গুলো পেরিয়ে উড়েছিল বিজয়ের নিশান। বিজাতীয়দের সাথে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ করে বাঙালি জাতি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে এদিন থেকে শুরু করে একে-একে বিজয়ের যাত্রা। এদিন থেকে বাঙালি জাতি তার আত্মপরিচয়কে প্রতিষ্ঠিত করে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তার এদেশীয় দোসরদের পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালিরা।
এ বিজয়ের জন্য বীর বাঙালি জাতিকে অনেক রক্ত দিতে হয়েছিল। বিজয়ের মাসের সূচনার প্রথম দিনটিকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, এদিনটিকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালনের জন্য দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উদ্যোগ নেন। বাঙালি জাতি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলে ও এক সময় অতিবাহিত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়া যেত না। এমনকি বাঙালি জাতির রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানো যেত না। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র নানা অপকৌশল অবলম্বন করে বাঙালির ইতিহাসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল।
একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, একাত্তরে হঠাৎ করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ আসেনি । বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ সময়ের আন্দোলন-রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায় ছিল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরের ইতিহাস বলতে গেলে সঙ্গে আসে পূর্ববর্তী ইতিহাস। বাঙালি জাতি মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন দিয়েই শুরু হয় বিজাতি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার সংগ্রাম। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন থেকে ছয় দফা আন্দোলন। এসব আন্দোলন-সংগ্রামে এদেশের সাধারণ মানুষ অনেক ত্যাগ তিতিক্ষাসহ অনেক রক্ত দিতে হয়। এ সব আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে যুক্ত হয় এগারো দফার আন্দোলন। এসব আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষিতে তৎকালীন স্বৈরশাসক ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর পাকিস্তানীরা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির উপর ষ্টিম-রোলার চালায়। এরপর ৭ মার্চ সেদিনের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এবং তাতে সুস্পষ্ট ঘোষণা ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’’। বঙ্গবন্ধুর এ ডাকে বাঙালি জাতি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ গভীর রাতে ঢাকায় হানাদার বাহিনী নির্বিচারে বাঙালির উপর হায়েনার দল বাঙালিকে হত্যা করতে থাকে। এদিন ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বাঙালি জাতি মারমুখি হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার যুদ্ধ।
এ যুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো দেশের বীর বাঙালিরা । হানাদার বাহিনীর অত্যাচার বেড়ে গেলে এদেশে আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল দল ন্যাপ কমিউনিষ্ট, ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা সহ দেশের প্রায় কোটি মানুষ দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়ে গড়ে তুলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এ মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দু’লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করলো ঢাকার সোহরাওয়াদী উদ্যানে। দেশ হলো শত্র“মুক্ত। নিংকুশ হলো স্বাধীনতা। অর্জিত মহান স্বাধীনতার বিজয়।
এ বিজয় দিবসে বাঙালি জাতির প্রত্যাশা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি গুলো ধরে রাখার।