জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩ হাজার একর বনের জমি দখল করে নিজেদের মালিকানা দাবি করেছিলো একটি গোষ্ঠি। মোহাজির দাবিদার এই গোষ্ঠিকে জমি থেকে উচ্ছেদে গেলে আদালতে মামলা করেন তারা। মামলার দীর্ঘ কার্যক্রম শেষে অবশেষে বন বিভাগের পক্ষেই রায় দিয়েছে হাই কোর্ট। ফলে নিজেদের ১৩ হাজার একর জমির অধিকার ফিরে পেলো বন বিভাগ।
সোমবার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। ৩৫ বছর আগের বন বিভাগ এই জমি অধিগ্রহণ করেছিল। ১৯৮৫ সালে জারি করা গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২৩৭ ব্যক্তি দুটি রিট আবেদন করে।
আবেদন খারিজ করে দেয়ায় বিশাল বনভূমি রক্ষা পেল বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এ মামলায় আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন চৌধুরী সানওয়ার আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নূরুল ও রোকেয়া আক্তার।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবেদনকারীরা নিজেদের দাবি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় হাইকোর্ট রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। তারা নিজেদের মোহাজির প্রমাণ করতে পারেনি।
রিট আবেদন বলা হয়, দেশ বিভাগের পরে (১৯৪৮-১৯৬৫) আসাম ও ত্রিপুরা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অভিবাসী হিসেবে সিলেট অঞ্চলে তারা অবস্থান নেন। তখন তাদের পরিচিতির জন্য মোহাজির কার্ড দেয়া হয়।
১৯৫১ সালে তৎকালীন সরকার সিলেট অঞ্চলে তাদের জীবিকা নির্বাহ ও বসবাসের জন্য কিছু ভূমি বন্দোবস্ত দেয়। কিন্তু ১৯৮৫ সালের ২০ আগষ্ট সরকার বনায়নের লক্ষ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার ১৩ হাজার একর ভূমি বন বিভাগের অধীনে ন্যাস্ত করে।
এই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে আব্দুল মোতালেব, ওসমান আলীসহ ১৭০ জন এবং ২০১৪ সালে রফিকুল ইসলাম ও ফরমান আলীসহ ৬৭ জন হাইকোর্টে দুটি রিট করেন।
শুনানি নিয়ে গেজেটের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করে হাইকোর্ট। আর জবাব দেয় বন বিভাগ। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালত বলেছে গেজেটটি যথাযথভাবে জারি করা হয়েছে। বনায়নের জন্যই এ গেজেট করা হয়েছে। কারণ বনভূমি রক্ষা করা না গেলে পরিবেশের বিপর্যয় হবে।
সিলেটের এই বনভূমির মত সারাদেশে অবৈধভাবে বনভূমি দখলকারীদের এবং এ সংক্রান্ত মামলার তালিকা চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। প্রধান বন সংরক্ষক তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে অ্যাটর্নি জেনারেল তার কাছে এই তালিকা চান। বন সংরক্ষক এক মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত তালিকা দেবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মামলার তালিকা পেলে একটি বেঞ্চে সেগুলো শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করা হবে। আর মামলা নিষ্পত্তির পর রায় সরকারের পক্ষে আসলে বনভূমিতে গড়ে উঠা স্থাপনা উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেয়া হবে। (খবর সংবাদদাতার)