কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগের তুলনায় দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে। সারাদেশে গত ১৫ দিনের দুর্ঘটনার খবর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগের তুলনায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঢাকাসহ সারাদেশের চিত্র প্রায় একই রকম। তবে ফোর লেনের মহাসড়কে দুর্ঘটনা কম হলেও আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে কমবেশি হচ্ছেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন, চালকসহ যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি মূলত এই দুই কারণে দুর্ঘটনা এখন কম হতে পারে। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির কোন সুযোগ নেই। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা বছরব্যাপী অব্যাহত রাখতে হবে।
তারা বলছেন, শীত আসন্ন। এই মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ে। তাই আগামী অন্তত চারমাস সড়কে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বলছেন, কুয়াশার কারণে বেশি গতিতে গাড়ি চালানো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেননা এতে মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়। তাছাড়া যানবাহনের গতি কমাতে মহাসড়কে স্পিড গান ব্যবহারের কথা ছিল। যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এই যন্ত্র বেশি বেশি তুলে দেয়ারও মতামত দেন তারা।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও এনা ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা চাই না দেশে সড়ক দুর্ঘটনা হোক। দুর্ঘটনায় অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু ঠেকাতে মালিক শ্রমিকরাও বদ্ধ পরিকর। তবে দৃশ্যমান বাস্তবতা হলো দুর্ঘটনা কমছে। এর ধারাবাহিকতা যদি থাকে তবে এটিই হবে খুব আশার সংবাদ।
এদিকে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করতে হলে বাস রুট সংস্কারের প্রয়োজন। তিনি বলেছেন, ঢাকায় বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের কোন বিকল্প নেই। ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক নিরাপত্তা : ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও উদ্যোগ’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার এখন যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা আরও ৩০ বছর আগে করার দরকার ছিল বলে মন্তব্য করেন কাদের। তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন যতই হোক, সড়কে এবং পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে, নিরাপদ করতে না পারলে আমাদের সকল উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা চার লেন, ছয় লেন, আট লেনের সড়ক করেছি। কিন্তু সড়ক নিরাপত্তা এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি। এখানে লুকানোর কিছু নেই, সত্য যা তা বলতেই হবে। সড়ক দুর্ঘটনা এখনও আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা।
ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ ঢাকা-মাওয়া সড়ক। এগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ইতোমধ্যে ফোর লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনাও অনেক কমেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ফোর লেন করার কাজ চলমান। সিলেটের কাজও শুরু হওয়ার পথে। এসব মহাসড়ক ফোর লেন হয়ে গেলে মাঝপথে থাকবে রোড ডিভাইডার। ফলে সড়কে মুখোমুখি সংঘর্ষ যেমন নিয়ন্ত্রণে আসবে তেমনি সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে।
রাজধানী ঢাকায়ও সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমেছে। জানতে চাইলে মতিঝিলে কর্তব্যরত ট্রাফিক কনস্টেবল লিটন চৌধুরী বলেন, এখন পথচারীসহ চালকরা বেশ সচেতন হচ্ছেন। নতুন সড়ক আইনে জরিমানা অনেক বেশি। তাছাড়া বিভিন্ন অপরাধে রয়েছে দণ্ডের বিধান। তাই অনেকে সচেতন হচ্ছেন। ফলে দুর্ঘটনাও কমছে। তার ভাষ্য, শুধু লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ নয়, জরিমানার ভয়ে লেন মানতেও আগের চেয়ে বেশি সচেতন চালকরা। উল্টো পথে গাড়ি এখন তেমন চলে না। তল্লাশিতে প্রায় সব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ট্যাক্স টোকেনের কাগজ হালনাগাদ পাওয়া যায়। আগের আইনে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জরিমানা ছিল ৫০০ টাকা। গতবছরের এক নবেম্বর কার্যকর হওয়া আইনে তা বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সার্জেন্ট জানালেন, লাইসেন্স না থাকলে মোটরসাইকেল চালককে চার হাজার এবং চার চাকার গাড়ির চালককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে মামলা দেয়া হয়। আগের আইনে নিবন্ধনহীন গাড়ি চালানোর জরিমানা ছিল দুই হাজার টাকা। এখন তা ৫০ হাজার টাকা। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর জরিমানা দুই হাজার থেকে বেড়ে ২৫ হাজার টাকা হয়েছে। সড়কে সরাসরি আইনের প্রয়োগ করা পুলিশ সার্জেন্টরা বলছেন, জরিমানা বাড়ায় হেলমেটবিহীন চালকের মতো নিবন্ধনহীন গাড়িও আর নেই।
সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে কিনা জানতে চাইলে নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, কিছুদিন সড়ক দুর্ঘটনা কম হলে এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। তাছাড়া দেশে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি হঠাৎ করেই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মূলত কথা হচ্ছে কয়েকদিন কম হতে পারে যে কোন কারণেই। আবার হঠাৎ করে খুব বেশি বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু আমরা চাই না দুর্ঘটনা বাড়ুক। আগামী অন্তত ছয়মাস যদি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে সেটি হবে আশার কথা। এই আশা সঞ্চার হয়- তবে এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।