সোয়েব বাসিত :
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এক গৃহবধূ তরণীকে তার স্বামীর সামনে গণধর্ষণের ঘটনার ৫ দিনের মাথায় মূল আসামী সাইফুরসহ এজারহারমীয় ৬ জন ও সন্ধিগ্ধ ২ জনসহ মোট ৮ আসামীকে র্যাব-পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারে সক্ষম হলেও সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গত ১১ অক্টোবর আখালিয়া নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র রায়হান উদ্দিন আহমদকে (৩৪) ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ সঙ্গীয় ফোর্স কথিত ছিনতাইয়ের অভিযোগে ফাঁড়িতে এনে ১০ হাজার টাকার জন্য নির্মম নির্যাতনে হত্যার ঘটনার মূল হোতা এসআই আকবর ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঘটনার সাথে আকবর সরাসরি জড়িত থাকলেও বরখাস্ত হওয়ার পর কি করে পালিয়ে গেলো এ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে রহস্য।
একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী একজন সদস্য সরাসরি একটি হত্যাকান্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। এনিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয় নগরীর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের।
নগরীর বন্দরবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ বলেন, রায়হান হত্যাকান্ডের সাথে এসআই আকবরের নাম আসার সাথে সাথেই উচিত ছিল তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে রাখা। এমনটা হলে সে পালিয়ে যেতে পারতো না।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌমিক বলেন, পুলিশই সুকৌশলে আকবরকে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করেছে। তিনি বলেন, একজন নিরপরাধ টকবগে যুবককে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি অবিলম্বে আকবরের গ্রেফতারের দাবী জানান।
বেসরকারী একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা রাসেল আহমদ বলেন, ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে রায়হান হত্যাকান্ড একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের অংশ। তিনি বলেন, এভাবে যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মানুষ মারার কাজে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করবে কে?
তরুণ রাজনীতিবিদ ইলিয়াছ জুয়েল বলেন, বিতর্কিত এসআই আকবর পালিয়ে যাওয়ার সাথে নিশ্চয়ই তারই ডিপার্টমেন্টের কেউ না কেউ জড়িত থাকতে পারে। তাকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে পালিয়ে যেতে যারা সহযোগিতা করছেন তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। শুধু আকবর নয় এ ঘটনায় রায়হানকে যিনি উঠিয়ে এনেছিলেন ফাঁড়ির সেই এএসআইসহ যারা নির্যাতনের পর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি সেই সকল পুলিশেরও অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানান।
গৃহবধূ তন্নি তামান্না আক্তার বলেন, আমার ছেলের বয়সও ২৪/২৫ সে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তাকেও যদি এভাবে একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে উঠিয়ে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সেটিও বিচিত্র কিছু নয়। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, রায়হানতো চলে গেছে তার অবুঝ শিশু জন্মের ৪ মাসের মাথায় তার পিতাকে হারালো। স্ত্রী তার স্বামীকে হারালো, বাবা-মা তাদের পুত্রকে হারালেন। ভাই তার বোনকে হারালেন। অথচ ঘটনার মুল নায়ক আকবর পালিয়ে গেলো। পুলিশের লোকজন কিছুই করতে পারলো না। তিনি বলেন, তাকে বরখাস্তের আগেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীতে নিয়ে আসা উচিত ছিল।
শিক্ষক শাহ আলম বলেন, কাউকে তার অপরাধের জন্য চাকুরী থেকে বরখাস্ত মানেই সে ঘটনার সাথে প্রাথমিকভাবে জড়িত এটি সহজেই বুঝা যায়। তিনি বলেন, এসআই আকবরকে বরখাস্ত করা হলো অথচ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে তাদের হেফাজতে নিলো না এটা যেমন রহস্যজনক। তিনি বলেন, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আকবরকে পালিয়ে যেতে পুলিশের লোকজনই সহযোগিতা করছে।
এদিকে রায়হান হত্যাকান্ডের পর সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ এর প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এসেছেন। প্রতিদিনই রায়হান হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে এবং ঘটনার মুল হোতা এসআই আকবরের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন, সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে খবর ছড়িয়েছে আকবর নাকি প্রতিবেশী একটি দেশে পালিয়ে গেছে। আর এমনটা ঘটলে এর দায়ভার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেই নিতে হবে।