স্টাফ রিপোর্টার :
ব্যাটারি চালিত রিক্সা, অটোবাইক, মটরবাইক, মিশুক জাতীয় যানবাহন বন্ধ করাসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন সিলেট সিএনজি চালিত অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মো. জাকারিয়া।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ব্যাটারি চালিত রিক্সা, অটোবাইক, মটরবাইক, মিশুক জাতীয় যানবাহন সম্পূর্ণ রূপে চলাচল বিক্রয়, বিপণন ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু সিলেটের প্রশাসনকে এ বিষয়ে বারবার বলা হলেও এ বিষয়ে কোনই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। যার ফলে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা শ্রমিকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
সিলেটের মেট্রোপলিটন এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের অংশটুকুতে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চলাচলের অনুমতি চেয়ে তিনি বলেন, মহাসড়কে সি.এন.জি চালিত অটোরিক্সা ও অন্যান্য থ্রী-হুইলার জাতীয় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এ মহাসড়ক সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা, ওসমানীনগর উপজেলা, বিশ্বনাথ উপজেলা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মানুষ আসা যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। এই উপজেলাগুলোর মানুষের যাতায়াতের জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থা না রেখে এ ভাবে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বন্ধ করাটা কতটুকু যুক্তিসংগত? সিলেটের মেট্রোপলিটন এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের অংশটুকু সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চলাচলের অনুমতি দিলে অন্তত বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা, ও ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ উপজেলার মানুষ যাতায়াতের সুবিধাটা পাবেন। সাথে আমাদের শ্রমিকরাও জীবীকা নির্বাহের পথ একটু হলেও সুগম হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আঞ্চলিক রোড দিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালিয়ে জীবন, জীবিকা রক্ষার কোন সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই। কারণ আঞ্চলিক সড়কগলোতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা, অটোবাইক, মটরবাইক, মিশুক ইত্যাদি যানবাহনে ভরপুর। আঞ্চলিক রোডে সি.এন.জি চালিত অটোরিক্সাগুলি ব্যাটারি চালিত রিক্সা, অটোবাইক এর সাথে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে টিকে থাকতে পারে না। কারণ সি.এন.জি চালিত অটোরিক্সার চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়, রুট পারমিট, ট্যাক্স, ফিটনেস ইত্যাদি দিতে হয়। কিন্তু ব্যাটারি চালিত রিক্সা, অটোবাইকের কেবল বিদ্যুতের চার্জের মাধ্যমেই চলাচল করতে পারে। তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় সি.এন.জি চালিত অটোরিক্সা টিকে থাকা খুবই কঠিন।
বিআরটিসি বাস ডিপু থেকে ডিপু চলাচল করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সভা, সেমিনারে আমাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে বিধানের বাইরে এই গাড়িগুলি চলবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে জনবহুল এলাকা স্কুলের সম্মুখে এবং সিএনজি চালিত অটোরিক্সার নির্দিষ্ট পার্কিং স্থানের পাশেই আম্বরখানায় দ্বিতল বাস ষ্টপিজ স্থাপন করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে এবং যাত্রি নিয়ে সিএনজি অটোরিক্সার চালক ও বিআরটিসি বাসের চালক ও হেল্পারদের মধ্যে একটি সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটার আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে। যাহা আমরা প্রশাসনের নিকট থেকে প্রত্যাশা করি না। এছাড়া নগর পরিবহণের বাসগুলো বিভিন্ন উপজেলা সদরে চলায় মৌখিক আপত্তির বিষয়টি জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। সংবাদসম্মেলনে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেওয়ার পরও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়না বলে অভিযোগ করেন তিনি । তিনি বলেন, আমাদের চালক ও মালিকরা সরকারকে পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ভ্যাট, ট্যাক্স ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবত টাকা জমা দেওয়ার পরও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয় না। ফি নেওয়ার পরেও কেন রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি। এতে টোকেন বাণিজ্য বন্ধ হবে এবং গরীব শ্রমিকরা উপকৃত হবে বলেও জানান তিনি। এসময় তিনি বেআইনি গাড়ি বিক্রি ও শো-রুম বন্ধের জোর দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি সিলেট বালাগঞ্জ সুলতানপুর সড়ক ও সিলেট মদিনা মার্কেট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত রাস্তাসহ ছোট গাড়ির চলাচল অনুপোযোগী রাস্তার সংস্কারের দবিয়ে জানান।
এসব বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে সিলেট সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন। তিনি বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছি। স্মারকলিপিতে উল্লেখ আছে আজ মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় স্থানীয় কোর্টপয়েন্টে ১ ঘন্টার শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হবে এবং আমাদের ৫ দফা দাবী আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়িত না হলে ১৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সিলেটের সকল সিএনজি চালিত অটোরিক্সা একযোগে জমা দেওয়া হবে। আমরা আর গাড়ি চালিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে চাই না।