মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে একটি মিশুক গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছে ১০ সদস্যের চালক পরিবার। অসহায় পরিবার সরকার সহ মানুষের কাছে জানিয়েছেন মানবিক আবেদন। একটি দুর্ঘটনা এ পরিবারকে বসিয়ে দিয়েছে পথে।
জগন্নাথপুর পৌর এলাকার হবিবপুর-কিশোরপুর গ্রামের দিনমজুরসাজু মিয়ার ১০ সদস্যের পরিবার রয়েছে। নেই তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন অন্যের বাড়িতে। মানুষের কাছে দারদেনা করে সাজু মিয়া তার ছেলে ইমন মিয়াকে একটি মিশুক গাড়ি কিনে দেন। ইমন মিয়া গাড়ি চালিয়ে কোন রকমে চালিয়ে আসছিল তার পরিবার।
তবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্থানীয় পৌর পয়েন্ট থেকে যাত্রীবেসে অপরিচিত এক যুবক ২৮০ টাকায় মিরপুর যাওয়ার কথা বলে ইমন মিয়ার মিশুক গাড়ি রিজার্ভ ভাড়া নেয়। গাড়ি যাওয়ার পথে সুনামগঞ্জী বাসট্যান্ড এলাকা থেকে আরেক যুবককে গাড়িতে তুলে নেয় ওই যাত্রী। মিরপুর গন্তব্যে যাওয়ার জন্য চলছে গাড়ি। হঠাৎ হবিবপুর মাদ্রাসা পয়েন্ট নামক স্থানে গিয়ে চলন্ত গাড়িতে থাকা যাত্রীবেশিরা অনেক চাপাচাপি করে চালক ইমন মিয়াকে ঠান্ডা আমের জুস খাওয়ায়। ঠান্ডা জুস খেয়ে ধীরেধীরে অচেতন হতে থাকে চালক ইমন। এক পর্যায়ে জগন্নাথপুর-সিলেট সড়কের ইসহাকপুর গ্রামের আল জান্নাত মাদ্রাসা এলাকায় গিয়ে একেবারেই অচেতন হয়ে পড়ে চালক ইমন মিয়া। এ সময় গাড়িতে থাকা যাত্রীবেশিরা চালক ইমনকে ড্রাইভিং সিট থেকে সরিয়ে পিছনের সিটে এনে তাদের মধ্যে একজন গাড়ি চালিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ব্রিজের নীচে খাদে অচেতন চালক ইমন মিয়াকে ফেলে রেখে তার মিশুক গাড়িটি নিয়ে উধাও হয়ে যায় যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীরা। রাত ৯ টার দিকে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় ইমনের সন্ধান পায় তার পরিবার। অচেতন ইমনকে ভর্তি করা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ঘটনায় চালক ইমনের ভাই সেলিম মিয়া বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে-অসহায় পরিবারের গাড়িটি ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় তাদের উপার্জন। বেকার হয়ে পড়ে ইমন মিয়া। এতে ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে আবারো বিপদে পড়ে যান দিনমজুর সাজু মিয়া। বর্তমানে অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে তাদের পরিবার। তার উপর রয়েছে দারদেনার চাপ।
এ বিষয়ে গাড়ি চালক ইমন মিয়া বলেন, প্রতিদিনের মতো আমি গাড়ি নিয়ে পৌর পয়েন্টে ছিলাম একটি টিভ পাওয়ার আশায়। হঠাৎ এক ব্যক্তি মিরপুর যাওয়ার কথা বলে আমাকে রিজার্ভ নিয়ে যায়। পথে আরেকজনকে তুলে। হবিবপুর মাদ্রাসা পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে তারা রীতিমতো জোর করে আমাকে ঠান্ডা আমের জুস খাওয়ায়। সরল বিশ্বাসে আমি ঠান্ডা খাওয়ার পর আস্তে আস্তে আমার ঘুম পেয়ে যায়। কোন রকমে আল জান্নাত মাদ্রাসা পর্যন্ত যাই। এরপর আর কিছুই জানিনা। চালক ইমন মিয়ার পিতা দিনমজুর সাজু মিয়া বলেন, আমার ছেলে ইমনের রোজগারে চলতো আমাদের পরিবার। গাড়িটি ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে আমরা খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। তাই গাড়িটি ফিরে পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। সেই সাথে আমরা অভাবী পরিবারকে সাহায্য করার জন্য সরকার সহ সকলের সাহায্য কামনা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর থানার এসআই আরিফ জানান, ছিনতাই হওয়া গাড়িটি উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে জগন্নাথপুর থেকে ওসমানীনগর পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ফুটেজের সূত্র ধরে আমাদের তদন্ত এগিয়ে চলছে।