সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

6

 

বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে হত্যার ঘটনা সত্যিকার অর্থেই দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে। কোনোভাবেই এই হত্যা বন্ধ হচ্ছে না বা বন্ধ করা যাচ্ছে না। ২০২১ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের ১৯তম স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভারতের তরফ থেকে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। গত মার্চে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের শেষ দিন সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সীমান্তে মৃত্যু বন্ধ, চোরাকারবার, মানবপাচারসহ নানা অপরাধ কমিয়ে আনাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘সীমান্তে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেটির সমাধানের জন্য আইনগত পথ-পদ্ধতি রয়েছে। কাউকে হত্যা করা কখনো কোনো সমাধান নয়।’ এসব হত্যাকাÐ কিন্তু একতরফা বলে মনে করেন তিনি।
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘যারা সীমান্ত অতিক্রম করে, তারা নিতান্তই সাধারণ লোকজন। …তাদের হত্যা করা আসলে একপ্রকার নিষ্ঠুরতা এবং এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’
অন্তর্র্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) সীমান্তে ফেলানীর মতো হত্যাকাÐ আর দেখতে চান না বলে উল্লেখ করেছেন। স্মর্তব্য ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত ফেলানীর মৃতদেহ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে ছিল সাড়ে চার ঘণ্টা।
প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল গণমাধ্যমসহ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে স্বর্ণা দাস নিহত হয়। পরে তার মরদেহ বিএসএফ নিয়ে যায়। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১৩ বছরের কিশোরী স্বর্ণা দাস নিহতের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। নির্মম ওই হত্যাকাÐে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ এ ধরনের জঘন্য কাজের পুনরাবৃত্তি রোধ এবং সব সীমান্ত হত্যার তদন্ত পরিচালনা ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে ভারতের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, স্বর্ণা জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। ভারতের ত্রিপুরায় থাকা বড় ভাইকে দেখতে মায়ের সঙ্গে বাড়ি থেকে রওনা দেয় স্বর্ণা রানী দাস। দালালচক্রের মাধ্যমে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা মারা যায় এবং স্বর্ণার মাসহ কয়েকজন আহত হয়।
ভারত ও বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত সব সময়ই সংবেদনশীল। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হয়। তার পরও সীমান্তে হত্যা কেন হবে? কেন সেখানে নিরীহ বাংলাদেশের মানুষকে নির্মমভাবে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হবে? সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং দুই দেশের মধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় যেসব সমস্যা রয়েছে, অবিলম্বে তার মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন।
সীমান্ত হত্যা বন্ধ হওয়া দরকার। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত বহুবার আলোচনা করেছে। সব সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। একটি বিষয় নিশ্চিত করা দরকার যে সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়াটা অনেক বেশি জরুরি। এই বিষয়ে দুই দেশের আলোচনা করা প্রয়োজন।
পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।