গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
জাফলং-গোয়াইনঘাট সড়কটিতে একটি গর্তের কারণেই দীর্ঘ দিন থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হচ্ছে গাড়ি চালক, দেশি-বিদেশী পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু তাই নয়, একটি গর্তের জন্য গোয়াইনঘাট থেকে জাফলংয়ের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, জাফলং থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের জন্য জাফলং-গোয়াইনঘাট সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। গত দুই থেকে তিন মাস সময়ের ব্যবধানে উপর্যুপরি ছয় দফা বন্যা আর পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ওই সড়কটি ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পাথর রাজ্যের এ পথটির বর্তমানে এমন বেহালদশা। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটে চলাচলও দায় হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পর্যটন কেন্দ্র জাফলং থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে রাধানগর বাজার পাড়ি দিয়ে ছোটখেল এলাকা থেকে তিতারাই পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। বর্তমানে ওই সড়কের গহড়া (শিমুলতলা) গ্রামের সম্মুখে অবস্থিত একটি সেতুর এপ্রোস বানের জলে ভেসে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দিয়ে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ৪৪টি গ্রামের লোকজন বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরে যাতায়াত করে থাকেন।
এছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পর্যটকদের একটি অংশও এ সড়ক ধরেই যাতায়াত করেন। ফলে একটি মাত্র গর্তের জন্য জাফলংবাসীকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে গাড়ী যোগে ৬ কিলোমিটারের স্থলে অতিক্রম করতে হয় অতিরিক্ত ৪০ কিলোমিটার। যাত্রীরা ও পর্যটকের রাধানগর বাজার থেকে জাফলং মামার দোকান ১১ কিলোমিটার। মামার দোকান থেকে তামাবিল ৫ কিলোমিটার। তামাবিল থেকে সারীঘাট ২৫ কিলোমিটার এবং সারীঘাট থেকে গোয়াইনঘাট ১৬ কিলোমিটার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সালে সড়কটির পুনর্নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বছর না ঘুরতেই এর বিভিন্ন অংশের কার্পেটিং উঠে যায়। এ ছাড়া ২০১২ সালের ভয়াল বন্যায় ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন বেহালদশা থাকার পর ২০১৭ সালে ডলি কন্সট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটির সংস্কার কাজ করে। কিন্তু সংস্কারের ছয় মাস না যেতেই সড়কটি আবার আগের চেহারায় ফিরে যায়। এরপর গত কয়েক দিনের বন্যায় রাস্তাটি ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া কয়েকটি সেতুর সংযোগ সড়কের মাটি ধসে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরপরও খানাখন্দ মাড়িয়ে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে কিছু যানবাহন চলাচল করে আসছিলো। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দ্রুত সংস্কারের জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
গোয়াইনঘাট স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী রাসেন্দ্র চন্দ্র দেব বলেন, বরাদ্দ না থাকায় সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা যাচ্ছে না। সড়কটি সংস্কারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে এর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে। তবে সড়কটি দিয়ে যাতে আপাতত যানবাহন চলাচল করতে পারে সে জন্য যতটুকু সম্ভব মেরামতের চেষ্টা করছি। শিগগিই মেরামতের কাজ শুরু হবে।
গোয়াইনঘাটের ইউএনও নাজমুস সাকিব বলেন, মন্ত্রী ইমরান আহমদের প্রচেষ্টায় এলজিইডির জরুরি মেরামত খাত থেকে সড়কটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরে সড়কটি মেরামত করা হয়। মাস খানিক সময় ওই সড়কটি পথে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছিল। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখ থেকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও স্থানীয় ভারি বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ওই সড়কের ব্যাপক ক্ষতি করে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে ওই সড়কের গহড়া (শিমুলতলা) গ্রামের সম্মুখে একটি সেতুর এপ্রোস পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায়। এ কারণে সেখানে গভীর একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গর্তটি দ্রুত ভরাট করে সড়কটিকে যান চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য উপজেলা প্রকৌলীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।