ওসমানীনগরের ধর্ষিতা কিশোরী চায় সন্তানের পিতৃপরিচয় ও স্বামীর স্বীকৃতি

8

শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
বিয়ের প্রলোভনে মাসের পর মাস ধর্ষণের স্বীকার হয়ে কিশোরীর গর্ভে জন্ম হয়েছে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান। ওসমানীনগরের রাতখাঁই এলাকায় এমন ঘটনায় ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের পিতৃ পরিচয় পেতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রিক্সা চালক পিতার কিশোরী কন্যা। কিশোরীসহ তার পরিবারের দাবী অনাগত এ সন্তানের পিতা উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের রাতখাঁই গ্রামের তারাই মামাতো ভাই মজনু মিয়ার পুত্র রায়হান (১৯)। মেয়ের গর্ভে আসা সন্তানের পিতৃপরিচয় ও মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে স্বামীর স্বীকৃতি নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় সালিশ ব্যক্তিবর্গের দ্বারে দ্বারে ঘুরে শেষ সম্বল রিক্সাটি বিক্রি করে তাদের পিছনে খরচ করে ব্যর্থ হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন কিশোরীর পিতা। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে ধর্ষকসহ তার পিতা-মাতা পালিয়ে থাকলেও ধর্ষকের চাচাসহ অনান্য প্রভাবাশালীরা সন্তানের স্বীকৃতি তো দূরের কথা উল্টো মামলা তুলে আনার জন্য হুমকি দিয়ে বেরাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে কে হবে এই নবাগত সন্তানের পিতা? কে নেবে এর দায়িত্ব? এমন সামাজিক প্রশ্নের মুখামুখি হতে হচ্ছে ধর্ষিতা কিশোরী ও তার পরিবারকে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের রাতখাই গ্রামের নির্যাতিতা কিশোরীর পিতা পেশায় একজন রিক্সা চালক। নিজের সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় ছোট বেলা থেকে একই গ্রামের মামা মজনু মিয়ার বাড়িতে বড় হতে হয়েছে ধর্ষিতা কিশোরীকে। কিশোরী মামার বাড়িতে থাকার সুবাদে তারই মামাতো ভাই রায়হান গত বছরের ১০ অক্টোবর রাতে প্রথমে ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে কিশোরীকে রায়হান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে কিশোরী তার পিতা-মাতাকে ঘটনাটি জানালে তারা রায়হানের পিতা মজনু মিয়া ও মাতা হামিদা বেগমের শরনাপন্ন হন। এক পর্যায়ে রায়হানের বাবা-মা শীঘ্রই নির্যাতিতা কিশোরীকে তাদের পুত্রবধূ হিসাবে ঘরে তুলার প্রতিশ্র“তি দেন। নিজ পরিবার থেকে এমন প্রতিশ্র“তির কথা জানতে পেরে রায়হান আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীর সাথে চালিয়ে যেতে থাকে শারীরিক সম্পর্ক। এক পর্যায়ে কিশোরী অন্ত:সত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর কয়েক দিনের মধ্যে রায়হানের ন্ত্রী করে ঘরে তুলা হবে এমন প্রতিশ্র“তিতে তাকে একই গ্রামে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন রায়হানের বাবা মজনু মিয়া। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একাধিক সালিশ ব্যক্তি বর্গের সহায়তায় ধর্ষকের পরিবারের লোকজন কিশোরীকে ৫০ হাজার টাকা প্রদানের আশ^াসসহ কিশোরীর গর্ভপাত করার প্রস্তাব প্রদান করে। এতে কিশোরীর পরিবার রাজি না হওয়ায় শুরু হয় গ্রাম্য শালিশ। কিশোরীকে রায়হানের ঘরে তুলা হবে এমন প্রতিশ্র“তিতে কিশোরীর পিতার একমাত্র সম্বল রিক্সাটিও বিক্রি করতে হয়। নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে শালিশানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সুহারা পাননি রিক্সাচালক কিশোরীর পিতা। অবশেষে ওই কিশোরী গত ৯ আগষ্ট একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে কিশোরী দেড় মাসের কন্যা শিশুকে নিয়ে পিতার স্বীকৃতির দাবিতে একাধিকবার রায়হানের পরিবারের কাছে গেলে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে কিশোরীর পিতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগটির তিনটি শুনানীর দিন ধার্য করেন। প্রথম শুনানীতে রায়হানের পরিবার বা তার পক্ষে কেউই উপস্থিত না হলেও পরবর্তী দুই শুনানীতে বাদি-বিবাদিদের উপস্থিতিতে কোন সুহারা না হওয়ায় ওসমানীনগর থানার ওসিকে লিখিত ভাবে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ বিষয়ে কিশোরীর পিতা বাদি হয়ে রবিবার ওসমানীনগর থানায় ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামালায় ধর্ষক রায়হান (১৯),তার পিতা মজনু মিয়া,মাতা হামিদা বেগম ও চাচা কামরু মিয়ার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরোও ২-৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
দেড় মাস বয়সী শিশু সন্তান কোলে নিয়ে কান্নাজনিত কন্ঠে কিশোরী জানায়, রায়হান আমাকে বিয়ের প্রলোভনে একাধিক বার ধর্ষণ করেছে। ফলে আমার কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে। এই সন্তানের বাবা রায়হান। কিন্তু আমি ও আমার পরিবারের লোকজন সমাজে নিরীহ ও হতদরিদ্র হওয়ায় সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও স্ত্রী হিসেবে রায়হানের কাছ থেকে স্বামীর স্বীকৃতি চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার এস আই সবিনয় বৈদ্য বলেন, অভিযুক্তদের আটকে অব্যাহত তৎপরতার পাশাপাশি মামলাটির সার্বিক বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখ জনক। কিশোরীর পিতা কর্তৃক অভিযোগ পাওয়ার পর তা মামলা আকারে গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। পাশাপাশি বিচারের মাধ্যমে মীমাংসা করার কথা বলে সালিশান নামদারি স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক কিশোরীর হতদ্ররিদ্র পিতার একমাত্র সম্বল রিক্সা বিক্রির বিষয়টির সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।