দেশের তিন ব্যাংকের ৮ লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন

60

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে ফাঁস হওয়া ফিনসেন ফাইলসের নথিতে বাংলাদেশের তিন ব্যাংকেরও নাম এসেছে। ওই তিন ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে (এসআইবিএল) বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক থেকে বিদেশে টাকা পাঠানো হয়েছে।
ওই তিন ব্যাংকের মোট আটটি ‘ট্রানজেকশনে’ সবমিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৭ ডলার (বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হারে বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৭ কোটি টাকার বেশি)। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এসব লেনদেন হয়েছে নথিতে দেখানো হয়েছে।
গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফিনান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের (ফিনসেন) হাতে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের সন্দেহজন লেনদেনের প্রায় আড়াই হাজার দলিল ফাঁস করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)।
‘ফিনসেন ফাইলস’ বলে পরিচিতি পাওয়া এসব নথির ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং বিভিন্ন ব্যাংকের সাসপিসিয়াস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্টস বা এসএআরসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বাজফিড নিউজ প্রতিবেদন করার পর নথিগুলো সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসিআইজের সঙ্গে শেয়ার করেছে। এরপর বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাজফিড নিউজ ২ হাজার একশর বেশি নথি হাতে পেয়েছে। সবমিলিয়ে আইসিআইজে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সন্দেহজনকভাবে লেনদেন করা হয়েছে। নথিগুলোতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি ব্যাংকের নাম বেশি এসেছে: এইচএসবিসি, জেপিমরগান, ডয়চে ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মেলন (বিএনওয়াই মেলন)।
বিভিন্ন ব্যাংক ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ফিনসেনকে এসব লেনদেনের তথ্য পাঠিয়েছিল। এসব লেনদেনে দুই লাখ কোটি ডলারের বেশি অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যার উৎস ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা ব্যাংকগুলো ফিনসেনকে জানিয়েছে।
কোনো লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলো গোপন প্রতিবেদন আকারে ফিনসেনকে তা জানায়, যাকে বলে সাসপিসিয়াস অ্যাক্টিভিটি রিপোর্টস। এর সবক্ষেত্রেই যে অর্থপাচার বা বেআইনি কিছু ঘটেছে, তা প্রমাণিত নয়।
বাজফিড নিউজ এসব গোপন দলিল হাতে পাওয়ার পর তা তারা আইসিআইজেকে দেয়। এরপর ৮৮টি দেশের ১০৮টি সংবাদমাধ্যমকে এসব নথি দেওয়া হয়, যা ধাপে ধাপে প্রকাশিত হচ্ছে ‘ফিনসেন ফাইলস’ নামে। আইসিআইজের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের তিন ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেনের যে আটটি ঘটনার তথ্য এসেছে, সেসব লেনদেনে আন্তর্জাতিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক মেলন করপোরেশন। তারাই ওই আট লেনদেন নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা ফিনসেনকে জানিয়েছে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কাজী ওসমান আলী জানিয়েছে, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। বিষয়টি আগের উল্লেখ করে কাজী ওসমান আলী বলেন, ‘এটি একটি রেমিটেন্স, আমার মনে হয় বিষয়টি সন্দেহজনক নয়। ওই টাকাটা আমাদের একজন ভালো গ্রাহকের কাছে এসেছিল। তিনি এখনো আমাদের গ্রাহক এবং নাম করা একজন ব্যবসায়ী। এরকম রেমিটেন্স আমাদের কাছে আসে।’
আর ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের লেনদেনের যেকথা বলা হচ্ছে তা ছিলো রপ্তানি আয়ের টাকা। যে প্রতিষ্ঠানের টাকা এই লেনদেন সন্দেহজনক ছিলো না। প্রতিষ্ঠানটি দেশের ভালো প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যাংকটির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ফিনসেন ফাইলসে দেশীয় ব্যাংকের নাম আসার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিআইএফইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান জানান, বিষয়টি আমেরিকান ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স খতিয়ে দেখেছে।
বিআইএফইউ প্রধান বলেন, ‘সন্দেহজনক লেনদেনের কোনও মাপকাঠি নেই। রেমিট্যান্স, ব্যক্তিগত, রপ্তানি বা দান-অনুদান কোন পারপার্স এসেছে সেটি বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে কে পাঠালো, নিষিদ্ধ কোন সংগঠন পাঠালো কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হয়।’