শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
পঁচিশ-পয়ত্রিশ বছর বয়সী তরুণদের এক সঙ্গে মিলিত হয়ে সাঁতার, দৌঁড় ও সাইক্লিং দেখে, তাল মিলিয়ে দৌঁড়াতে দেখা যায় উৎসুক জনতাকেও। উৎসাহ যোগান প্রতিযোগীদের। শুধু প্রতিযোগিতা কালিন সময়েই নয় প্রতিযোগীরা যখন ফিনিশ লাইন স্পর্শ করছিলেন তখনই শতশত দর্শকদের করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল জোন এলাকা। বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে ওসমানীনগরেই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ট্রায়াথলন ও ডুয়াথলন প্রতিযোগিতা ২০২০। মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে উপজেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও রানর্স কমিউনিটির আয়োজনে শুক্রবার বালাগঞ্জের বোয়ালজুর বড়বাগা নদী থেকে থেকে ট্রায়াথলন ও ওসমানীনগরের তাজপুর কদমতলা এলাকা থেকে ডুয়াথলন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে তাজপুর এসে তা শেষ হয়। ট্রায়াথলন দল উপজেলার ময়নাবাজার এলাকায় এসে সাঁতার শেষ করে সেখান থেকে সাইক্লিং করে বালাগঞ্জ উপজেলা সদর ঘুরে ৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তাজপুরে পৌঁছান। সেখানে সাইকেল রেখে ১০ কিলোমিটারের দৌঁড় শুরু করেন। এ দৌঁড়ের মাধ্যমেই সমাপ্তি রেখায় পৌঁছান ট্রায়াথলনের প্রতিযোগীরা। ভোরবেলায় রাস্তায় পেছনে নম্বর লাগানো সাইক্লিস্টদের আনাগোনা দেখা দুই উপজেলার পথচারী, যানবাহনের যাত্রীরাসহ বাসা-বাড়িতে থাকা উৎসুক নারীরাও নিবিড় দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকতে দেখা যায় প্রতিযোগীদের দিকে। সাঁতার কেটে ওঠেই পোশাক পরিবর্তন করে সাইকেল নিয়ে ছুটা। আবার সাইকেল রেখে অংশ গ্রহণ করেন দৌঁড়ে। হঠাৎ করে এমন কার্যক্রম খবুই অদ্ভুতই মনে হয়েছে স্থানীয়দের। প্রতিযোগীদের পথ দেখাতে তাজপুর বালাগঞ্জ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিল আয়োজকদের স্বেচ্ছাসেবক দল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে মানুষের আনাগোনা। প্রতিযোগিতার ফিনিশ লাইন পার্কিং জোনের পাশে কেউ অসুস্থ হতে দেখা না গেলেও দীর্ঘ সময়ের এ প্রতিযোগিতায় অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠেন। তাই আয়োজকদের পক্ষ থেকে খাবার স্যালাইন, কলা ও পানি দেওয়া হয় তাদের। প্রতিযোগিতায় জাতীয় লেভেল এর এথলেটরা ছাড়াও সাঁতার, সাইক্লিং ও রানিং ফেডারেশন প্রতিযোগিরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৩৫ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। সকাল ১১টায় উপজেলার তাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের উপজেলা শাখার সভাপতি আনিচ্ছুজ্জামান সেলিমের সভাপতিত্বে ও শাখার সাধারণ সম্পাদক এড. খন্দকার মাছুম আহমদ ও এস এম সুহেলের যৌথ পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি শামিম আহমদ। জেলা পরিষদের সদস্য সুষমা সুলতানা রুহি, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনা মিয়া। বক্তব্য রাখেন, উপজেলা রানার্স কমিটির সমন্বয়ক কেএম সুহেবুর রহমান, লায়েক রহমান, মঞ্জুর আহমদ আরিফ, সাদেক মিয়া, ফয়সল আহমদ, ছালেহ আহমদ ছালিক। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন,বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন নেতা সাজিদ মিয়া, ইউসুফ আলী, সাহিন আহমদ, সফজ্জূল হক খালেদ, মৃত্যুঞ্জয় দাশ রামু, খয়রুল আমিন, নাসির উদ্দিন, অজয় পাল, সুফিয়ান আহমদ, রাজন আহমদ, রুবেল আহমদ, রাজ আহমদ, সুহেল আহমদ, সেবুল আহমদ, শাহ জাহান, জুনেদ আহমদ, এমদাদুর রাজা চৌধুরী, এমাদ বকস্, বেলাল আহমদ, আব্দুল হক, রুমন আহমদ, কামরান আহমদ, শাকিল আহমদ, বদরুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য প্রত্যেক মানুষেরই প্রয়োজন নিয়মিত শরীর চর্চা। সাঁতার, দৌঁড় ও সাইক্লিংয়ের মাধ্যমেই সুষ্ঠু শরীরচর্চা সম্ভব। সুষ্ঠু সাধনা, পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই সৃষ্ট তারুণ্যে দেশের বোঝা নয়, পরণিত হয় সম্পদে। মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে উপজেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও রানার্স কমিউনিটির নেতৃবৃন্দদের এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। এটা আগামীতে অব্যহত রাখার আহ্বান জানান বক্তারা। অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন ট্রায়াথলনের প্রতিযোগী আশরাফুল আলম কাশেম, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী নিলয় হাসান, তৃতীয় স্থান অর্জনকারী মো: মুনসুর আহমদ, ডুয়াথলনের প্রথমস্থান অর্জনকারী উৎস ধর, দ্বীতীয় স্থান অর্জনকারী তাসিন আহমদ ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দীপ চক্রবর্তীকে নগদ টাকাসহ সমম্মাননা ক্রেষ্ট প্রধান করেন অতিথিবৃন্দ। এ সময় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে ৪র্থ ও ৫ম স্থান অর্জনকারীদেরকে উপজেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ সময় প্রতিযোগিতায় উপস্থিত থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য সিলেট জেলা সাইক্লিং কমিটির ফটোগ্রাফারদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আয়োজকরা।