১৬ বছর পর পাকিস্তান বধ

32

bd_win_2_338455575স্পোর্টস ডেস্ক :
১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই পাকিস্তানকে হারায় টাইগাররা। কিন্তু এরপর ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও পাকিস্তানকে আর হারাতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। বেশ কয়েকবার সম্ভাবনা জাগিয়েও জয়বঞ্চিত হতে হয়েছে মাশরাফি-মুশফিক-সাকিবদের।
কিন্তু গতকাল শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) লেখা হলো ভিন্ন রূপকথা। এবার আর জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসা নয়। অনেকটা বলে-কয়ে পাকিস্তানকে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে হারাল টাইগার বাহিনী।
ব্যাটিংয়ে তামিম, মুশফিকদের পর বোলিংয়ে আরাফাত সানি আর তাসকিনের দৃঢ়তায় পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে ১-০ তে লিড নিল টাইগাররা।
বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ৩৩০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামেন পাকিস্তানি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সরফরাজ আহমেদ ও আজহার আলি। ইনিংসের ১১তম ওভারে আরাফাত সানি টাইগারদের প্রথম সাফল্য এনে দেন। সরফরাজ আহমেদকে দলীয় ৫৩ রানের মাথায় নাসির হোসেনের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত করেন সানী। আউট হওয়ার আগে সরফরাজ করেন ২৪ রান।
দলীয় ৫৩ রানের মাথায় পাক ওপেনার সরফরাজকে বিদায়ের পর সৌম্য সরকারের অসাধারণ এক থ্রোতে বিদায় নেন মোহাম্মদ হাফিজ। রান আউট হওয়ার আগে পাকিস্তানের অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান মাত্র ৪ রান করেন।
দলীয় ৫৯ রানে দুই উইকেট হারানো পাকিস্তানের রানের চাকা সচল রেখে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন পাক দলপতি আজহার আলি। তবে, ইনিংসের ২৮তম ওভারে তাসকিনের করা বলে উইকেটের পিছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন ক্রমেই বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে উঠা আজহার।
তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৭৩ বলে ৭টি চারে ৭২ রান করেন আজহার। হারিস সোহেলের সঙ্গে ৮৯ রানের জুটি গড়েন পাক অধিনায়ক।
তাসকিনের হুঙ্কারে পাকিস্তানের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। সেট ব্যাটসম্যান হারিস সোহেলকে সাজঘরের পথে ফেরত পাঠান তাসকিন আহমেদ। মাহামুদুল্লাহর তালুবন্দি হওয়ার আগে সোহেল ৬৪ বলে ৫১ রান করেন।
দলীয় ১৭৫ রানের মাথায় পাকিস্তানের চতুর্থ উইকেটের পতনের পর ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন পাকিস্তানের হয়ে অভিষিক্ত হওয়া মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে, আরাফাত সানির আরেকটি শিকারে সাজঘরের পথ ধরেন ফাওয়াদ আলম। সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হয়ে আউট হওয়ার আগে তিনি ১৪ রান করেন। একই ওভারে সাদ নাসিমকে কোনো রান করতে না দিয়ে বোল্ড করেন সানি।
ওয়াহাব রিয়াজকে সরাসরি বোল্ড করে টাইগারদের জয়ের দিকে আরও একধাপ এগিয়ে নেন তাসকিন। এরপর টাইগারদের অপেক্ষায় রাখা ডানহাতি ব্যাটসম্যান রিজওয়ানকে ফেরান রুবেল হোসেন। আউট হওয়ার আগে অভিষিক্ত এ ব্যাটসম্যান ৫৮ বলে ৮টি চারে ৬৭ রান করে নাসিরের হাতে ধরা পড়েন। একই ওভারে জুনায়েদ খান কোনো রান না করেই রান আউট হন। আর শেষ ব্যাটসম্যান সাঈদ আজমলকে ফেরান সাকিব।
৪৫.২ ওভার শেষেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। আরাফাত সানি আর তাসকিন নেন তিনটি করে উইকেট। টাইগার বোলারদের কাছে মাথা নত করে ২৫০ রান তুলতে সক্ষম হয় পাক শিবির।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিমের জোড়া শতকে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৭৮ রানের জুটি গড়েন তামিম-মুশফিক। এই প্রথম একই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান শতক পান।
পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের দলীয় ৩২৬ রানের সর্বোচ্চ রানও আজ পেরিয়ে যায় লাল-সবুজের বাংলাদেশ। যে কোনো দলের বিপক্ষে তাই এটিই টাইগারদের দলীয় সর্বোচ্চ রান।
নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেট হারিয়ে ৩২৯ রান।
পাকিস্তান বধে দলীয় ৬৭ রানের মাথায় দুই ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর তামিম আর মুশফিক মিলে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান। এ দুই টাইগার ব্যাটিং ক্রিজে অসাধারণ দৃঢ়তায় ব্যাট চালিয়ে পাক শিবিরে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান। তামিম এবং মুশফিক ১৭৮ রানের জুটি গড়েন।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক হাঁকিয়ে নিজের জাত চেনান তামিম ইকবাল। ৭৫ বলে ক্যারিয়ারের ২৯তম অর্ধশতক হাঁকানো তামিম ১১২ বলে নিজের শতক পূর্ণ করেন।
বিশ্বকাপের সাফল্যের পর ফেভারিট হিসেবে মাঠে নেমে তার প্রমান দেন তামিম-মুশফিক। তবে, ইনিংসের ৪২তম ওভারে ওয়াহাব রিয়াজের বলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন তামিম। আউট হওয়ার আগে বাঁহাতি এ ওপেনার করেন ১৩২ রান। ১৩৫ বলের ইনিংসে তামিম ১৫টি চার আর তিনটি ছক্কা হাঁকান।
তামিম বিদায় নিলেও ব্যাটিং ক্রিজে থেকে ব্যাটে ঝড় তুলেন মুশফিক। মিডলঅর্ডারের ব্যাটিং স্তম্ভ খ্যাত মুশফিক ৬৯ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক পূর্ণ করেন। অবশেষে ৭৭ বল মোকাবেলা করে পাক বোলারদের তুলোধুনো করে ১৩টি চার আর দুটি ছয়ে মুশফিক করেন ১০৬ রান। ইনিংসের ৪৮তম ওভারে উইকেটের পিছনে সরফরাজের তালুবন্দি হন মুশফিক।
এছাড়া সদ্য আইপিএল খেলে আসা সাকিব আল হাসান করেন ২৭ বলে ৩১ রান। শেষ ওভারে সাকিব ও সাব্বিরকে ফেরানো ওয়াহাব রিয়াজ ৫৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার হন।