দোয়ারাবাজারের পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নানা সমস্যায় জর্জরিত

35
দোয়ারাবাজারের পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।

দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বদৌলতে পাল্টে গেছে ইউনিয়নের ২৪টি গ্রামের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবার বেহাল দৃশ্যপট। প্রতিষ্ঠানটির কল্যাণে জেলা শহরের সেবা এখন সহজেই গ্রামে বসে পাওয়া যাচ্ছে। কম খরচে গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক চেকআপ, নরমাল ডেলিভারি, প্রসূতি মা ও শিশুর পরিচর্যা, পরিবার পরিকল্পনাসহ অন্যান্য সেবাসমূহ দোরগোড়ায় পেতে পারায় উপকৃত হচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। দিন দিন সেবার মান বাড়ার সাথে সাথে সাধারণ মানুষদের চাহিদাও বাড়ছে সমানতালে। কিন্তু অবকাঠামো ও জনবল সংকটের কারণে চাহিদামাফিক সেবা পেতে পারছেন না সেবাগ্রহিতারা।
পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, প্রান্তিক এলাকার এই প্রতিষ্ঠানটি শুরুর দিকে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে এতোটা পরিচিতি পায়নি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত উঠান বৈঠক, মা সমাবেশ, স্যাটেলাইট ক্লিনিক কার্যক্রম চালু রাখায় সেবাগ্রহিতাদের নিকট প্রতিষ্ঠানটির পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে। পরিবার পরিকল্পনায় বেড়েছে সাধারণ মানুষের আগ্রহ। এখানে প্রতিমাসে ২৫-৩০টি নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনায় ২০১৮, ১৯, ২০ একটানা তিনবছর উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র। এছাড়াও চলতি বছর জেলা পর্যায়ে পরিদর্শক পদে প্রথম স্থান অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, গর্ভবতী মা সহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ২০০০ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুর হয়। প্রতিষ্ঠার শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটিতে দেখা দেয় জনবল সংকট। জনবল সংকটের মধ্য দিয়েই শুরু থেকে আজোবধি নির্বিঘ্নে সেবা দিয়ে যাচ্ছে পান্ডার গাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটিতে ১৩টি পদের মধ্যে ৫টিই খালি রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিজিটরের পদটি দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তার পদটিও শুরু থেকেই খালি থাকায় সেবাগ্রহিতারা বঞ্চিত হচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষুধ সরবরাহ না হওয়ায় ঔষুধের খোঁজে দূরদূরান্তে ধরণা দিতে হচ্ছে সেবাগ্রহিতাদের। প্রতিষ্ঠানটির সামনের দিকে রাস্তা না থাকায় সাধারণ মানুষসহ সেবাগ্রহিতাদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রেদওয়ানুর রহমান জানান, প্রতিদিন আমরা সেবা দিয়ে আছি। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এখানে ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদান করা হয়। সেবার মান বাড়ায় দিন দিন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। জনবল ও অবকাঠামো সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে জেলার পর্যায়ে শীর্ষ স্থান দখল করতে পারব আমরা।
পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ জানান, প্রতিষ্ঠানটির সামনের জমি সরকারি ভাবে অধিগ্রহণ না হওয়ায় এদিক দিয়ে রাস্তা করা যাচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণ করা গেলে জনগণের সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে রাস্তা করে দিতে পারতাম। তবে প্রতিষ্ঠানটির সংস্কার কাজে সরকারি ভাবে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের পরিবার পরিকল্পনা নীতিমালায় ১০ শয্যা বিশিষ্ট ইউনিয়ন পর্যায়ে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা আছে। আমাদের পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি ১০ শয্যায় উন্নীত করা গেলে ইউনিয়নবাসী উপকৃত হবে। এব্যাপারে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছি। জনবল ও অবকাঠামো সংকট নিরসনে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার উপপরিচালক মোজাম্মেল হক প্রতিবেদককে জানান, পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সেবার মান খুবই ভালো। শূন্য পদে নিয়োগের প্রকৃয়া চলমান রয়েছে। ভিজিটর নিয়োগ পরীক্ষার রেজাল্ট হয়ে গেছেন। প্রশিক্ষণ শেষে যোগদান করবেন। অন্যান্য শূণ্য পদের তালিকা আমরা পাঠিয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো শূন্যপদ পূরণ করা হবে।