স্টাফ রিপোর্টার :
কোনো দুর্ঘটনায় নয় লাকী রানী পালকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে স্বামীসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে হত্যাকান্ডে জড়িতরা। বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মামলার বাদী ফেঞ্চুগঞ্জ থানার কটালপুর পালপাড়া গ্রামের এবং বর্তমানে নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ পালের মেয়ে প্রিয়াংকা রাণী পাল।
লিখিত বক্তব্যে প্রিয়াংকা রানী পাল বলেন, আমার বড় বোন লাকী রাণী পালের সাথে ২০১৮ সালের ১ মার্চ দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার সেনগ্রামের হলধর চন্দ্র পালের পুত্র স্কুল শিক্ষক হিমাদ্রী পালের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের দেড় বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। আমার বোন বিয়ের আগ থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট অফিসে কম্পিউটার ডাটা অপারেটর পদে চাকুরি করতো। বিয়ের পর থেকে লাকির স্বামী ও শ^শুরালয়ের লোকজন বেতনের সমস্ত টাকা নিয়ে নিত। শুধু তাই নয়, হিমাদ্রী পাল প্রায়ই আমাদের বাসা থেকে টাকা নিয়ে দিতে লাকিকে চাপ প্রয়োগ করতো। কিন্তু আমার বোন তাদের কথায় সায় না দেয়ায় তারা প্রায়ই আমার বোনকে শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করতো। আমার বোন বিষয়টি অনেকবার আমাদেরকে জানিয়েছে। অবুঝ সন্তানের দিকে থাকিয়ে সে অনেক সময় মুখ বুঝে এগুলো সহ্য করেছে। এমনকি আমার বোনের বেতনের পুরো টাকা তারা নিয়ে গেলেও তাকে অফিসে যাথায়াতের খরচ দিতে কার্পণ্য করতো। পাউবো থেকে আমার বোনকে সরকারি কোয়ার্টারে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার স্বামী তাকে নিয়ে সরকারি কোয়ার্টার কিংবা নগরীর মেজরটিলা এলাকায় হিমাদ্রী পালদের নিজস্ব বাসায় রাখতে রাজি হয়নি। যে কারণে বাধ্য হয়ে আমার বোন দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি থেকেই অফিসে আসা-যাওয়া করতো।
প্রিয়াংকা বলেন, গত ৯ আগষ্ট আনুমানিক রাত ৮ টা ৩০ মিনিটের দিকে আমার বাবার মোবাইলে লাকীর শ^শুর হলধর চন্দ্র পাল কল দিয়ে বলেন, লাকীর শরীরে আগুন লেগেছে। আমরা ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি । এমন খবর শুনে আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি এবং আমার বাবা প্রদীপ পাল দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমার বোনের শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে। আমি বোনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। তাকে কিভাবে এবং কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে বিস্তারিত তিনি আমাকে বলেন। শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় এবং লাকীর অবস্থা ক্রমশঃ খারাপের দিকে যাওয়ায় ডাক্তাররা তাকে আইসিইউতে নিয়ে নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ আগষ্ট ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে আমার বোন মারা যান। আমার বোনকে আহত অবস্থায় যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তার স্বামী হিমাদ্রী পাল ও শ^াশুড়ি শিখা রাণী পাল একবারের জন্যও হাসপাতালে আসেনি। ময়না তদন্ত শেষে আমার বোনের লাশ নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি সেনগ্রামে চলে যান সবাই। ১০ আগষ্ট সকাল ৯ টার দিকে পুলিশ ও লাকীর শ^শুর আমার বাবাকে থানায় যেতে বলেন। আমার বাবা একজন হার্টের রোগী এবং মানষিকভাবে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় থানায় যান। এ সময় তারা থানার বাইরে আমার বাবাকে হুমকি দিয়ে বলে, তাদের কথামত স্বাক্ষর না দিলে তারা আমার বোনপুত্র (ভাগনা) হিরক পালকে মেরে ফেলবে। আসামীগণের হুমকি ও আমার বোনের শিশু সন্তানের প্রাণের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমার বোনের মৃত্যু সংবাদটি বাবা লিখিতভাবে মোগলাবাজার থানাকে অবহিত করেন। তাদের আগের তৈরি কাগজে আমার পিতার স্বাক্ষর তারা জোরপূর্বক নিয়ে নেয়। যা আমরা পরিবারের লোকজন কিছুই জানতে পারিনি।
প্রিয়াংকা রানী পাল বলেন, মৃত্যুর আগে আমার বোন বলে যান তার স্বামী, দেবর, শাশুড়ি ও শ্বশুর মিলে তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার প্রায় সমস্ত শরীর পুড়ে যাবার পর তারা তাকে হাসপাতালে নেয়। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে গত ১৭ আগষ্ট এসএমপির মোগলাবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি। মামলা নং ১২। এ মামলায় লাকীর স্বামী হিমাদ্রী পালকে প্রধান আসামি করেছি। অন্য আসামিরা হলেন, লাকীর শ^াশড়ী শিখা রাণী পাল, দেবর হিমেল পাল এবং শ^শুর হলধর চন্দ্র পাল। আসামিদের গ্রেপ্তারে প্রিয়াংকা রানী পাল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রিয়াংকা রানীর বাবা, মা ও দুই বোন উপস্থিত ছিলেন।