মৌলভীবাজারে কৃষক সংগ্রাম সমিতির স্মারকলিপি ॥ পাটের মূল্য মণ প্রতি ৩,০০০ টাকা নির্ধারণ ও রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল চালুর দাবি

12

পাটের সর্বনিম্ন মূল্য মণ প্রতি ৩,০০০ টাকা নির্ধারণ ও রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল চালুর দাবিতে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে এক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক অবনী শর্ম্মা স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী বরাবর পেশ করা হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় করোনা ভাইরাস মহামারিজনিত পরিস্থিতিতে আগামীতে ক্ষুধা, দারিদ্র্যতা এমনকি দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত, ছোট ব্যবসীসহ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে দিশেহারা। আর প্রবাসের প্রায় ১ কোটি শ্রমিকের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়ার পাশাপাশি ইতোমধ্যে কয়েক লাখ শ্রমিক দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। ভূমিহীন-গরীব কৃষকের সাথে উক্ত কর্মহীনরা যুক্ত হয়ে গ্রামাঞ্চলে কর্মহীন মানুষের তালিকা বৃদ্ধি করছে। এই পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে কৃষক, কৃষি ও কৃষি নির্ভর শিল্পসহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরী। কিন্তু তা না করে সরকার যখন মাঠভরা পাট, বিশ্বব্যাপী পাটের সুদিন সে সময় সরকার রাষ্টায়ত্ব পাটকলগুলি বন্ধ করেছে। এমনিতেই করোনা মহামারী, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যার কারণে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। দেশে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার একর জমিতে উৎপাদিত পাট ১৫ লাখ ৬০ হাজার টন যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ১১ লাখ টনেরও বেশি। কাঁচা পাট গড়ে প্রতি বছর রপ্তানি হয় ২.৫ লাখ টন যার মূল্য প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা। পাটপণ্যের গড় উৎপাদন ১০ লাখ ৫০ হাজার টন যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ব্যবহার ১ লাখ ৫০ হাজার টনের মতো। আর বাকি প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার টন পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি হয় যার মূল্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানি প্রতি বছরই বাড়ছে। পাটের সম্ভাবনা বাড়ছে দেশে এবং সারা বিশ্বে। পাট এমন একটি পণ্য যার কোনো কিছুই ফেলনা নয়। পাটের পাতা, আঁশ, পাটখড়ি সবই কাজে লাগে। যে জমিতে পাট চাষ করা হয় তার উর্বরতা বৃদ্ধিসহ পরিবেশ রক্ষায় পাটের অবদান কম নয়। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে ২৩৫ ধরনের পাটপণ্যের এক প্রদর্শনী হয়েছিল। পাটকাঠি দিয়ে চারকোল উৎপাদন করলে তা জ্বালানি সমস্যা সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। চাল, গম, আটা, চিনিসহ ১৮টি পণ্যের মোড়ক ব্যবহারে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার আদেশ জারি হয়েছিল। ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট ২০১০ বাস্তবায়ন হলে দেশের বাজারে পাটের বিপুল চাহিদার সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি করোনা পরবর্তী পরিবেশ সচেতনতার কারণে পাটের সম্ভাবনা বিশ্বব্যাপীই বাড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি হচ্ছে পাটের নতুন বাজার। গাড়ি ও বিমানের আভ্যন্তরিণ সাজ-সজ্জা এবং সৌন্দর্য বর্ধনে পাট দ্বারা তৈরি পণ্যের ব্যবহার হচ্ছে। বিএমডাব্লিউ, ভক্সওয়াগন, টয়োটা, নিশান গাড়ির বহু যন্ত্রাংশ তৈরিতেও পাটের ব্যবহার বাড়ছে। ইউরোপের ২৮টি দেশে একযোগে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেখানে পাট হতে পারে সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক বিকল্প। সুতা তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বাংলাদেশে ভিসকস ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ভিসকস তৈরি করা সম্ভব পাটের আঁশ থেকে। পাট নিয়ে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন, দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ, গবেষণাকাজে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, পাট বীজের চাহিদা শতভাগ পূরণ করাসহ প্রয়োজনীয় ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ রকম অবস্থায় পাটের সর্বনিম্ন মূল্য মণপ্রতি ৩০০০ টাকা নির্ধারণ এবং রাষ্টায়ত্ব পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করে পাটকলগুলি আধুনিকায়ন চালু করার মাধ্যমে শ্রমিক-কৃষক তথা জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বিজ্ঞপ্তি