কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিক, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জী চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পীকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সন্ধ্যায় প্রণব মুখার্জীর ছেলে অভিজিৎ মুখার্জী টুইটে জানিয়েছেন, খুবই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমার বাবা প্রণব মুখার্জী মারা গেছেন। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ভারতজুড়ে মানুষের কাছ থেকে প্রার্থনা পেয়েছি। এরপরও বাবাকে ফেরাতে পারিনি।
গত ৯ আগষ্ট রাতে নিজের দিল্লীর বাড়িতে শৌচাগারে পড়ে গিয়েছিলেন প্রণব মুখার্জী। পরদিন সকাল থেকে তার স্থায়ুঘটিত কিছু সমস্যা দেখা দেয়। বাঁ হাত নাড়াচাড়া করতে সমস্যা হচ্ছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্রুত ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এমআরআই স্ক্যানে দেখা যায়, তার মাথার ভেতর রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর অবস্থার উন্নতি হয়নি। ১৩ আগষ্ট থেকে তিনি গভীর কোমায় চলে যান।
প্রণব মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসের রোগী। ১০ আগষ্ট হাসপাতালে ভর্তির পর ধরা পড়ে তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। সেই অবস্থাতেই ওই দিন রাতে দীর্ঘ অস্ত্রোপচার হয়। তারপর থেকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল প্রণব মুখার্জীকে। অস্ত্রোপচারের আগে নিজের করোনা সংক্রমিত হওয়ার খবর টুইট করে জানিয়েছিলেন তিনিই। সেটাই ছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শেষ টুইট।
ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। ২০১২ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রণব মুখার্জী কয়েকবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আনুগত্য ও অসামান্য প্রজ্ঞাবান এই বাঙালি ভারতের সর্বক্ষেত্রে শ্রদ্ধার পাত্র। গতবছরের আগস্টে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে শোকে আপ্লুত ও স্মৃতিকাতর হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবার ও শেখ হাসিনার নিজের বহু স্মৃতি প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন। এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন রাজনীতিবিদ ও আমাদের পরম সুহৃদ হিসেবে প্রণব মুখার্জীর অনন্য অবদান কখনও বিস্মৃত হবার নয়। আমি সবসময় মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে নির্বাসিত থাকাকালীন প্রণব মুখার্জী আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এমন দুঃসময়ে তিনি আমার পরিবারের খোঁজ খবর রাখতেন, যেকোন প্রয়োজনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেশে ফেরার পরও প্রণব মুখার্জী সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু। যেকোন সঙ্কটে তিনি সাহস যুগিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে ভারত হারাল একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতা আর বাংলাদেশ হারাল একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।