বন্ধ সিনেমা হল পুনরায় চালু করতে আর্থিক সহ নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে – প্রধানমন্ত্রী

64
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার শুরুতে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ন বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এবং “টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট : বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২০” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করছেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বন্ধ থাকা সিনেমা হল পুনরায় চালু করতে আর্থিকসহ নীতিগত সহায়তা দেয়া হবে বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে এজন্য বিশেষ তহবিল গঠনের কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও শিক্ষিত তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভায় দুই হাজার ৫৭০ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে এক হাজার ৪৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৮২ কোটি ৬০ লাখ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে পাওয়া যাবে এক হাজার দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা। সভা শেষে প্রকল্পসহ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বন্ধ থাকা প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সিনেমা হল মালিকরা কেউ আসে না, কেউ ভাড়া দিয়ে গেছে। কেউ বিক্রি করে দিয়েছে। কেউ বহুতল ভবনও করেছে। সিনেমা হল মালিকরা সকলে মিলে যদি ঋণ চান, তাহলে তা দেয়া হবে। একটা বড় প্রকল্প। হল মালিকরা যদি সমঝোতা করতে চান, চালাতে চান, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, তাহলে একটা বিশেষ তহবিল করে তাদের সহযোগিতা করা যায়। সিনেমা হলগুলো এভাবে পড়ে আছে। তারা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে তাদের আমরা সহযোগিতা করব। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, সিনেমা হল মালিকরা যদি এই ব্যবসাকে পুনরায় বাঁচাতে চান বা পারেন, তাহলে সরকার তাদের আর্থিক ঋণ সহায়তা দেবে। এজন্য বিশেষ তহবিল গঠনের কথা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন।
এছাড়াও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের অনেক স্মার্ট ও শিক্ষিত তরুণ অনলাইনে ভাল আয় করে। কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতির অভাবে তরুণরা নানা সমস্যায় পড়ছে। কারও কাছে এসব তরুণ পেশার পরিচয় দিতে পারছে না। তাই অনলাইনে আয়কারী ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আইসিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একনেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১১টি)’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ৭৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আইসিটি খাতে সরকার ইতোমধ্যে ভাল কাজ করেছে। ভাল আয় হচ্ছে। অনেকে লাখ লাখ টাকা আয় করেন বাসায় থেকে। আজকে একজন মন্ত্রী বললেন, উত্তরবঙ্গের এক ছেলে কোটি টাকা আয় করে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা বললেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, তারা (ফ্রিল্যান্সার) এত ভাল কাজ করে, স্মার্ট, সুন্দর কাপড় পরে, কিন্তু বিয়ে করতে গিয়ে অসুবিধা হয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে বলে, কী কাজ করো? তারা বলে, ফ্রিল্যান্সিং করি। তারা না কেরানি, না অফিসার, না পুলিশ। অথচ তারা কেরানি, অফিসারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আয় করেন। কিন্তু বিয়ে করতে পারছে না। এটা দূর করার জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) উপায় খুঁজচ্ছেন। কী করা যায়। সবাইকে বলেছেন, আপনারা চিন্তাভাবনা করেন। তারা এই যে কাজ করছে এর সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি কীভাবে দেয়া যায় তার উপায় বের করেন। রেজিস্ট্রেশন পেতে পারে কিনা, সদস্য হতে পারে কিনা বা সার্টিফিকেট কেউ দিতে পারে কিনা। বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়াও ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরেকটি কথা বললেন, ভাষা শেখেন, ভাষা। খালি বাংলা শিখলে আর ইংরেজি শিখলে হবে না। চীনা ভাষা শেখেন, কাজে লাগবে। জাপানী শেখেন, কাজে লাগবে। ফরাসী ভাষা শেখেন, কাজে লাগবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন বেশি করে বিদেশী ভাষা শেখে। এ জন্য তিনি আইটি মন্ত্রণালয়কে বলেছেন আইটি ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি ভাষা শিক্ষারও একটা ব্যবস্থা করতে পার কি না দেখ। ‘কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রƒণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন (তৃতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত)’ নামেও একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, এখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আরও গবেষণা করুন। মাংস, মৎস্যের প্রচুর প্রয়োজন আছে। পুষ্টির দরকার আছে। বাঙালীরা যেন আরও শক্তিশালী হয়। বেশি করে প্রাণিজ আমিষ খেতে হবে- মাছ, মাংস। তবে অযথা পশুপাখি হত্যা করবেন না। যেগুলো খাওয়ার জন্য চাষ করেন, সেগুলো খেতে পারেন।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ‘কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রƒণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন (তৃতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২০৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ৬৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। ১ হাজার ৪৫৪ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ডিপিসিসির আওতাধীন এলাকায় উপকেন্দ্র নির্মাণ ও পুনর্বাসন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ক্যাপাসিটর ব্যাংক স্থাপন এবং স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থার প্রবর্তন’ প্রকল্প। এম এ মান্নান বলেন, চলতি অর্থবছরের শতভাগ বিদ্যুত দেয়ার কাজ শেষ হয়ে যাবে। এখন হচ্ছে আপগ্রেডেশন ক্যাপাসিটি সংস্কার। এছাড়াও অনুমোদন দেয়া হয়েছে, ৪৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং ৭৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১১টি)’ প্রকল্প।
একনেকে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্যমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা অংশ নেন।