শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গ্যাস বঞ্চিত ওসমানীনগরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)’র চাহিদা। সাধারণ মানুষের চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উপজেলার যততত্র গড়ে উঠা এলপিজি সিলিন্ডারের বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছ থেকে ইচ্ছা মতো দাম নেয়ার অনৈতিক প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা ও মূল্য নির্ধারণ না থাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা জুড়ে চলছে সিলিন্ডার ব্যবসার ‘নৈরাজ্য’ যেন দেখার কেউ নেই। ফলে মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকাসহ উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারের অধিকাংশ পানের দোকান থেকে শুরু করে জুতার দোকান পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার ভর্তি গ্যাস। এতে আশঙ্কা রয়েছে বিস্ফোরণসহ ভয়াবহ দুর্ঘটনার। সম্প্রতি ওসমানীনগরে যততত্র গড়ে উঠা সিলিন্ডার ব্যবসা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একদিন তাজপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উপজেলার গোয়ালাবাজার ও তাজপুরের প্রায় অর্ধ শতাধিক অবৈধ্য এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রেতাদের মধ্যে জরিমানা করা হয়েছিল শুধু মাত্র দুইজনকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওই অভিযানকে রহস্যজনক লোক দেখানো বলে মন্তব্য করে সচেতন মহলের অনেকেই জানান, বর্তমানে ওসমানীনগরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা এলপিজি সিলিন্ডারের দোকান থাকালেও অভিযানে নেমে জরিমানা করা হয় দুইজনকে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমন লোক দেখানো কর্মকান্ডেই আইনের তোয়াক্কা না করে উপজেলার প্রতিটি বাজারের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মুদি দোকান, হার্ডওয়্যার, ফাস্টফুড, কসমেটিক, তেল বিক্রয়, ফ্লেক্সিলোডের দোকানসহ হাইওয়ে রাস্তার পাশে, ফুটপাতে গ্রাম্য রাস্তার মোড়ে, ফার্মেসিতে ও থান কাপড় বিক্রির দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিপদজনক গ্যাস সিলিন্ডার। সিলিন্ডারগুলো দোকানের সামনে বা ভেতরে খোলামেলা অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখার ফলে যে কোনো বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির আশঙ্কা বিদ্যমান। এ ব্যাপারে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, উপজেলায় বিভিন্ন বাজারে প্রায় ২ শতাধিক এলপিজি সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে। তবে হাতে গুনা দুই একটিতে বিস্ফোরণ অধিদপ্তরের অনুমতি থাকলেও বাকি দোকানগুলো বিস্ফোরণ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই অবৈধ ভাবে বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে সাড়ে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারে দাম আদায় করা হচ্ছে ৮শ থেকে ১১শ টাকা পর্যন্ত বা বিক্রেতাদের ইচ্ছামতো। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর ডিলাররা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ নিলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা মজুদ আইনের অনুসরণ করছেন না। এ বিষয়ে স্থানীয়রা শঙ্কিত থাকলেও প্রশাসন নির্বিকার। ১৮৮৪ ও ২০০৪ সালের বিস্ফোরক আইনে লাইসেন্স ছাড়া এলপিজি গ্যাস বিক্রি ও মজুদ নিষিদ্ধ এবং আটটি সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স আবশ্যক থাকলেও এসব দোকানগুলিতে নেই প্রাথমিক বিপর্যয়ে রক্ষায় ড্রাই পাউডার ও কার্বন ডাই অক্সাইড সরঞ্জামসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা নিরব থাকায় প্রকাশ্য চলছে এমন নৈরাজ্য।
তবে একাধিক এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রেতারা জানিয়েছেন,্ এসবের নিয়মনীতির বিষয়ে তাদের জানা নেই। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি ও ডিলারদের উৎসাহে বাড়তি কিছু টাকা পাওয়ার জন্য অন্য ব্যবসার পাশাপাশি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছেন।
ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন, যেখানে-সেখানে অবাধে সিলিন্ডার বিক্রি হুমকির সম্মুখিনসহ বিরাজ করছে ভয়াবহ বিস্ফোরণসহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এ ব্যাপারে বিক্রেতাদের নিয়মনীতির অনুসরণের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সুনজর দেয়া জরুরী।
ব্যাঙের ছাতার মতো এলপিজি সিলেন্ডার বিক্রির বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে সিলেট ডিভিশনাল এলপিজি গ্যাস এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হামিদ বলেন, বিষয়টি আমাদেরও ভাবিয়ে তুলছে। এর জন্য প্রশাসনের নিরবতা ও কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের খুচরা বিক্রেতাদের অতিউৎসাহই দায়ি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য ইতিমধ্যে আমরা সংগঠনিক বৈঠক করেছি। বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে তিনি জানান, সিলিন্ডারের গায়ে নির্ধারিত মূল্য না দেয়ার সুযোগে কোম্পানীগুলোই বেশি লাভবান হচ্ছে। এখানে খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফা যত সামান্য। বালাগঞ্জ ওসমানীনগর তাজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বলেন, খোঁজ নিয়ে শীঘ্রই ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ তাহমিনা আক্তার বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার পর তা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। শীঘ্রই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।