সাংবাদিকদের মধ্যে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ॥ করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার পৃথিবীর অন্যদেশের চেয়ে বাংলাদেশে কম

67
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে করোনাকালিন পরিস্থিতিতে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
আগষ্টের শোকের মাসকে স্মরণ করে তথ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার পৃথিবীতে যে কটি দেশে সবচেয়ে কম তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১.২৫ থেকে ১.৩ শতাংশ। যা আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও কম। করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর গত সাড়ে ৫ মাসে প্রধানমন্ত্রী একদিনও বিশ্রাম নেননি। করোনা মোকাবেলায় তিনি যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তা অতুলনীয়।
তিনি বলেন, অনেকেই বলেছিলো করোনার সময়ে দেশে হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। বলা হয়েছিলো রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- একজন মানুষও অনাহারে মরেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টায় বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে করোনাকালিন পরিস্থিতিতে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও তথ্য অফিসের বিভাগীয় উপ পরিচালক মিজ জুলিয়া যেসমিন মিলির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাশ পুরকায়স্থ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আরও বলেন, গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ। এই স্তম্ভ তৈরি করেন সাংবাদিকরা। বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করছে। এই করোনাকালেও সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। আমরা দলমত নির্বিশেষে যারা সংকটে আছেন তাদের সকলকে প্রণোদনা দিচ্ছি। এমনকি ভারত-পাকিস্তানেও সাংবাদিকদের এভাবে সরকার প্রণোদনা দেয়নি। করোনাকালে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া করোনা সংকটকালে গণমাধ্যম সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, সমালোচনা থাকবে। না হলে বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। সরকার মনে করে, সমালোচনা পথচলাকালে শাণিত করে। কিন্তু সমালোচনা হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ। সমাজকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য। অন্ধের মতো একপেশে সমালোচনা গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের উন্নয়নের ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যে দশেকে একদা তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়েছিলো সেই দেশ বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশে এখন কুঁড়েঘর খুঁজে পাওয়া যায় না। ছেঁড়া কাপড় পরা মানুষ পাওয়া যায় না, স্যান্ডেল ছাড়া মানুষ পাওয়া যায় না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। দেশ বদলে গেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছিলো, যারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তারা ১৫ আগস্ট ঘটিয়েছিল। আজকেও যারা শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে তারাও ষড়যন্ত্র করছে। এই দুষ্টচক্র, যারা দেশের বিরুদ্ধে, অর্থনীতির বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদের

করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দিচ্ছেন তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। চেক গ্রহণ করছেন দৈনিক কাজিরবাজার পত্রিকার বার্তা সম্পাদক জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক সোয়েব বাসিত।

বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের আরও সোচ্চার হতে হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, সাংবাদিকতা নামক মহান পেশার লোকজনের দৈন্যদশার কথা উপলব্ধি করে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছেন। এর ও আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য গড়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট। সেই প্রেস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। তিনি বলেন, আজ এই দিনটি সিলেটের সাংবাদিকদের একটি স্মরণীয় দিন। এর আগে কোন সরকার সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ায়নি। এখন একমাত্র প্রধানমন্ত্রীয় শেখ হাসিনা দাঁড়িয়েছেন। মোল্লা জালাল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, সৃষ্টির পক্ষে কাজ করুন ধ্বংসের পথে নয়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, বিশ্বের কোন দেশ এখনো গণমাধ্যম কর্মীদের কোন সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীদের পাশে দাঁডিয়ে আজ প্রমাণ করেছেন তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের পরম বন্ধু।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসে সময়ে মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য পৌছে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নজির সৃষ্টি করেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, করোনাকালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ২৫০০ টাকা করে বাংলাদেশের মানুষকে যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেকর্ড হয়ে থাকবেন।
সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ১৩টি উপজেলায় করোনা চলাকালীন সময়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি এবং এখনও আমরা সাহায্য বন্টন করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ সিলেট বিভাগের শতাধিক সাংবাদিকের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করেন।