ছনি চৌধুরী হবিগঞ্জ থেকে :
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার ও স্থানীয় বেশ কয়েকটি গ্রামের বের হওয়ার একমাত্র সড়ক পাকাকরণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
প্রায় ৩ মাস আগে রাস্তার কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ শেষ হলেও এখনো কোন অগ্রগতি নেই কাজের। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে কাজ। এর ফলে অল্প বৃষ্টির পরই মনে হয় রাস্তাগুলো যেন ধান বোনার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পায়ে হেঁটেও মানুষ চলাচল করতে পারে না। ফলে ইউনিয়ন অফিসে সেবা নিতে যাওয়া জণসাধারণ ও আশপাশের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।
এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার (দেওপাড়া-শতক) পাকা সড়ক থেকে গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে গদারবাজার পর্যন্ত সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। পাশাপাশি এই সড়ক দিয়েই ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দকৃত চাল, জরুরী মালামাল ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন যোগে আনা নেয়া হয়। দীর্ঘদিন সংস্কারে অভাবে অযত্নে অবহেলায় পড়ে ছিল সড়কটি। উক্ত সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাভুক্ত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত বছরের শুরু দিকে সড়কের ৭৪০ মিটার স্থান পাকা করণে প্রায় ৫৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৪ টাকা ব্যয়ে টেন্ডার হয়। পরে কাজটি পায় এলজিইডি’র তালিকাভুক্ত হবিগঞ্জের লাখাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জেসান এন্টারপ্রাইজ’।
এলজিইডি‘র তথ্য মতে রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার কথা ২০১৯ সালের ১৬ মে এবং শেষ করার কথা ছিল চলতি বছরের ২১ মে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরের নভেম্বর মাসে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার একমাত্র সড়কটির নির্মাণে কাজ শুরু করে। তবে সড়কটির নির্মাণ কাজ যেনতেনভাবে সম্পন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। রাস্তার নির্মাণ কাজে ৬ ইঞ্চি বালু ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও বালুর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় পাহাড় কেটে উজার করে নিয়ে আসা লাল মাটি। তখন অভিযোগ উঠে- ‘স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ইশারায় সড়কের পাশে লামরোহ গ্রাম থেকে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহার করা হয় রাস্তায়’। বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহারের ঘটনায় এলাকাজুড়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা সমালোচনার ঝড়। এনিয়ে ফলাও করে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলে পাহাড় কাটা বন্ধে তৎপরতা চালায় প্রশাসন। এরপর থেকেই রাস্তার কাজ বন্ধ রেখে উধাও হয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এরপর থেকে এভাবেই কেটে যায় মাসের পর মাস। এবার বৃষ্টিতে কাদা জমেছে সড়কে, ফলে চরম বিপাকে পড়েন আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। ইউনিয়ন অফিসে সেবা গ্রহীতাদের দুর্ভোগের তো কোন শেষই নেই। আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের রয়েছে চরম বিপাকে। রাস্তা খারাপ হওয়ায় আত্মীয়স্বজন বাড়িতে আসতে চান না। এমন কী জরুরী প্রয়োজনে এই সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন যাতায়াত করতে পারে না।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, একটি ইউনিয়ন পরিষদের একমাত্র রাস্তা এমকি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার নির্মাণকাজে অনিয়ম হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
গত ১৫ দিন পূর্বে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় শিশু সন্তানসহ এক মহিলা পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে রাস্তার এমন বেহাল অবস্থা দেখে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মনে দয়া মায়া না হলেও ওই এলাকার এক সৌদি প্রবাসী রাস্তায় বালু ভর্তি কয়েকটি বস্তা ফেলে দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ার উপযোগী করে দেন।
ক্ষুব্ধ লোকজন বলেন, চেয়ারম্যান মেম্বার সাহেবরা কি হেলিকপ্টার যোগে যাতায়াত করেন নাকি? তাদের কি এসব নজরে আসে না।’ জ¦ালাময়ী বেহাল দশায় ঝাঝরা হয়ে গেছে সড়কের মায়াবী বুক। দুর্ভাগা মানুষের আকুতি-মিনতি, ফরিয়াদ কোন কিছুই যেন কানে ঢুকছে না কানওয়ালা কর্তা বাবুদের। নাকি খাঁটি সরিষার তৈল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন তারা এ হিসাবও যেন বুঝা বড় দায়। এ অবস্থা থেকে অধিকার কিংবা অভিযোগের সুরে নয়, ফরিয়াদির মত প্রতিকার চান ভোক্তভোগীরা। এ বিষয়ে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এতদিন ধরে তারা কি করছেন, রাস্তার কাজ কবে নাগাদ আবার শুরু হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কারো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
গজনাইপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুব আলী নুরু বলেন, রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের জরুরী কাজে যানবাহন প্রবেশ করতে অনেক কষ্ট হয়, এ দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী সাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘প্রথমে বালু ফেলার পর, এতে কিছু অনিয়ম হলে ঠিকাদারকে সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়, কিন্তু সে কোন কথা শুনেনি। তাই কোন বিল দেয়া হয়নি। এরপর থেকেই কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোন কর্ণপাত করেনি। এই কাজ বাতিল করতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’