স্টাফ রিপোর্টার :
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের সাথে জড়িত কতিপয় জঙ্গি সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এ হামলার জন্য ২৩ জুলাইকে বেছে নিয়েছিল তারা। কিন্তু পুলিশের কড়া নজরদারি থাকায় জঙ্গিদের হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।
সিলেট থেকে নব্য জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি)’র ৫ সদস্যকে গ্রেফতারের পর গতকাল বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সিটিটিসি। ওই সংবাদ সম্মেলনেই সিলেট থেকে গ্রেফতার জঙ্গিদের আদ্যোপান্ত জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।
সিটিটিসি জানায়, সিলেট নগরীর মিরাবাজার, দক্ষিণ সুরমা ও শহরতলির টুকেরবাজারে অভিযান চালিয়ে শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান, সায়েম মির্জা, রুবেল আহমেদ, সানাউল ইসলাম সাদিক ও আব্দুর রহিম জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়। ঈদের আগে ঢাকার পল্টনে পুলিশের মোটরসাইকেলে বোমা রাখার ঘটনায় এরা জড়িত। পুলিশ সদর দপ্তর ও সিটিটিসি’র ল’ ফুল ইন্টারসেপশন সেলের (এলআইসি) একটি টিম গত রবিবার রাত থেকে গত মঙ্গলবার রাত অবধি সিলেটে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে। এছাড়া বোমা তৈরির সরঞ্জামও জব্দ করা হয়।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান নব্য জেএমবির শুরা সদস্য। তার নেতৃৃত্বে সিলেট নগরীর শাপলাবাগের শাহ ভিলায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের আড়ালে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, নাইমুজ্জামান ২০১৯ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স করেছে এবং ছাত্রজীবনে সে ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলো। সংগঠনের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতেই সে শাপলাবাগের বাসাটি ভাড়া নেয়। তিনি জানান, সায়েম মির্জা মদন মোহন কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনিও ছাত্রশিবিরের সাথে জড়িত। সানাউল ইসলাম সাদিক শহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। রুবেল আহমেদ ২০১৬ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। টুকেরবাজারে সার, বীজ ও কীটনাশকের ব্যবসা করেন তিনি। আব্দুর রহিম জুয়েল রেন্ট-এ-কারের চালক। সন্ত্রাসী হামলায় তার গাড়ি ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নব্য জেএমবির এই দলটি ২৩ জুলাই হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পুলিশের কড়া নজরদারিতে তারা ব্যর্থ হয়ে, ২৪ জুলাই পল্টন চেকপোস্টের পাশে ও ৩১ জুলাই নওগাঁ জেলার সাপাহার এলাকায় হিন্দু মন্দিরে বোমা হামলা করে। নওগাঁয় বিস্ফোরিত হয় ছোট্ট একটি ককটেল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদেরকে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য বলেছে। কথিত আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানিয়েছে তারা।
এদিকে, পল্টনে পুলিশের চেকপোস্টের পাশে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় সিলেট থেকে গ্রেফতার নব্য জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৫ সদস্যকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এই আদেশ দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৫ আসামিকে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক ৫ জনকে ৭ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। রিমান্ডকৃতরা হচ্ছেন, শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান (২৬), সানাউল ইসলাম সাদি (২৮), রুবেল আহমেদ (২৮), আব্দুর রহিম জুয়েল (৩০) ও সায়েম মির্জা (২৪)।