মহামারী করোনা দুর্যোগে আজও বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব বিপর্যস্ত। আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং লাতিন আমেরিকায় করোনা সংক্রমণের প্রকোপে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো চরম দুঃসময় অতিক্রম করছে। বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। আর প্রতি ঘণ্টায় ২৪৭ জন লোকের প্রাণহানিতে মৃত্যু সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন বিশ্বে গড়ে প্রায় ৬ হাজার লোক মারা যাচ্ছে। ভয়াবহ এক অশনি সঙ্কেত মোকাবেলা করছে সারা দুনিয়া। করোনা সঙ্কট ছাড়াও এর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিক্রিয়ায় থমকে গেছে উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো। অর্থনৈতিক মন্দার দ্বারপ্রান্তে বিশ্ববাসী। শিক্ষা খাতেও তৈরি হয়েছে অনাকাক্সিক্ষত স্থবিরতা। এই মহামারীর মোকাবেলায় সর্বস্তরের মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে চলছে এক ধরনের মহাসঙ্কট এবং অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশও এই অনভিপ্রেত লড়াইকে সামাল দিয়ে প্রতিদিনের যাপিত জীবন অতিক্রম করে যাচ্ছে। উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোও এক কঠিন পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ। তার পরেও থমকে বসে থাকার সুযোগ মাত্র নেই। করোনাকে সম্মুখ সমরে মোকাবেলা করে আমাদের আগামীর সঙ্কট মোচনে কঠিন ব্রতে এগিয়ে যেতে হবে। এই দুঃসময়ে একা পথচলাও কঠিন। ফলে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে পাশে দাঁড়াচ্ছে কিছু বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্রাতৃত্বসুলভ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। করোনা সঙ্কটেও জাপান বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযোগিতা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। করোনার অদম্য অভিঘাত সামলাতে জাপান বাংলাদেশকে ৩২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৫ বিলিয়ন জাপানী ইয়েন) দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের টেলিফোন কথোপকথনের এই অর্থ সাহায্যের প্রস্তাবে উঠে আসে। এই অর্থ প্রদান সংক্রান্ত একটি বিল ইতোমধ্যে জাপানী পার্লামেন্ট অনুমোদনও দিয়েছে। বর্তমানে অস্থির করোনা মহামারী ছাড়াও দুই সরকারপ্রধান পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক আলাপ করেন। দুই দেশের বন্ধুপ্রতিম দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আরও জোরদার করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করতে বেশি করে জাপানের সহযোগিতা কামনা করেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে মতবিনিময় হয়েছে। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানে জাপানের পাশে থাকার নিশ্চয়তাও পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে জাপান করোনা সুরক্ষার উপকরণ পিপিই, মাস্ক এবং গগলসসহ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী বাংলাদেশকে দেয়ায় ধন্যবাদ জানানো হয়। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জাপানের সার্বিক সহযোগিতা স্মরণীয়। তেমন উন্নয়নশীল কর্মযোগ ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় উভয় পক্ষ থেকে।
করোনার চরম দুঃসময়ে জাপানের এই অর্থ সহায়তা দেশের চিকিৎসা ও গবেষণা খাতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তবে এই অর্থ যাতে যথার্থ কাজে বিনিয়োগ করা যায় সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করতে হবে। ক্রান্তিকালে প্রদত্ত এই অর্থ যেন যথার্থ সঙ্কট মোচনে বিনিয়োগ হয় এই প্রত্যাশা সর্বজনের।