ছাতকে ৩য় দফায় বন্যা, বিশুদ্ধ পানি সংকটে লাখ মানুষ

9
ছাতকে ৩য় দফা বন্যায় তলিয়ে গেছে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক।

আতিকুর রহমান মাহমুদ, ছাতক থেকে :
ছাতকে উজান থেকে নেমে আসা পানি ও পাহাড়ী ডলের পানিতে তৃতীয় দফা বন্যায় ছাতক ট্রাফিক পয়েন্ট, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কসহ অর্ধশত রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।
লাখো মানুষের জীবন যাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত অতিবাহিত করছে এখানের কয়েক লক্ষ মানুষ। প্রথম ও দ্বিতীয় দফা বন্যার ভোগান্তি শেষ হতে না হতেই তৃতীয় দফা বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে এখানের মানুষ।
কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট, শ’ শ’ ঘরবাড়ি ও বসতভিটা বানের পানিতে ভেঙ্গে গেছে। রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। টানা দু’দফা বন্যায় গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙ্গে চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপোযুগী পড়েছে। এখন তৃতীয় দফা বন্যায় এসব সড়কের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। ঘন-ঘন বন্যায় ভোগান্তির পাশাপাশি চরম খাদ্যাভাব ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছে বান্যা কবলিত মানুষ। টানা তিনদিন ধরে চলা মুশলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তৃতীয় দফা বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশংকা রয়েছে।
সুরমাসহ চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট ছাড়া সব সড়কই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিছিন্ন হয়ে পড়েছে শহরের সাথে সব অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। শহর কিংবা শহরের আশাপাশের পানিবন্দি মানুষ সরকারী- বেশরকারী ত্রান বা সহ্য়াতা পেলেও পানি বন্দি বিশাল গ্রামীণ জনগোষ্ঠি থেকে যাচ্ছে সাহায্য-সহায়তার বাইরে। যার ফলে কাঁচা ঘর-বাড়িতে বসবাসরত বিশাল গ্রামীণ জনগোষ্ঠিই মূলত বন্যাকবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এসব গ্রামীণ মানুষ ২য় দফা বন্যার ভোগান্তি শেষে নিজেদের গুছানোর আগে ৩য় দফা বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা নিজেদের ঘরে থেকেই বন্যার সাথে যুদ্ধ করছে।
গত ২৮ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দফায়-দফায় বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এখানের কৃষকরা। শাক-সবজীর বাগান ও বীজতলা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজ সংগ্রহ ও বীজতলা প্রস্তুতের জন্য কৃষকদের সকল পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে ৩য় দফার বন্যায়। এখন আমন ফসল চাষাবাদ নিয়ে দিশেহারা এখানের কৃষকরা। এদিকে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ-সিলেট, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-জাউয়া, ছাতক-দোয়ারা সড়কের বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে আবারো তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলের কারনে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় ১৫৮ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেলা নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ১৬৫ সেন্টিমিটার এবং পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ১৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে।