সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগা কবরস্থানে দরগা মহল্লা ও আশপাশের দু’একটি এলাকার লাশ দাফন ছাড়া অন্যান্য জায়গার লাশ দাফন বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে নগরীর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একমাত্র কবরস্থান মানিকপীর টিলায়। গত ৪ মাসে সেখানে লাশ দাফন হয়েছে ৩৫১জনের। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে জুন মাস পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারী ১২ জনের লাশ ওই কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
দরগা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী দরগা কবরস্থানে করোনায় মৃত্যুবরণকারী কাউকে দাফন করা হচ্ছে না। শুধু তাই নয় দরগা মহল্লা ও এর আশপাশ এলাকা ছাড়া অন্যদের এ মুহুর্তে দরগা কবরস্থানে দাফনের বিষয়টি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ অবস্থায় হযরত মানিক পীর (র:) টিলা কবরস্থানে একের পর এক লাশ দাফনে জায়গা যেমন সংকুচিত হয়ে এসেছে তেমনি লাশ দাফনের জন্য ভালো জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে মানিকপীর টিলায় দেখা গেছে, টিলার ঝোঁপঝাড় কেটে নতুন জায়গা তৈরীর করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের জন্য আদালদা জায়গা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মানিকপীর টিলার পূর্ব-উত্তর দিকের পিছনের জায়গায়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চের প্রথম থেকে যখন সিলেট নগরীতে করোনা ভাইরাস সংক্রামণ বাড়তে থাকে আর তখন থেকেই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্দেশে করোনা মারা যাওয়া রোগী দাফনের মানিকপীর টিলার পূর্ব-উত্তর দিকের পিছনের ঝোঁপঝাড় কেটে নতুন জায়গা তৈরী করা হয়। যাতে করোনা রোগে মৃত্যুবরণকারীদের সেখানে দাফন করা যায়। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখা জানিয়েছে মানিকপীর টিলা কবরস্থানে এ পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া ১২ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। মে মাসে ১০৩ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় মারা যাওয়া ৬ জনকে দাফন করা হয়। জুনে মৃত্যুবরণকারী ১৪৩ জনকে দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে করোন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৬ জনকে ওইটিলার বিশেষ স্থানে দাফন করা হয়েছে। মার্চ মাসে ৬৮ জন, এপ্রিলে ৪৭ জন ওই টিলার কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে এরা সবাই ছিলেন স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারী।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত এই ৬ মাসে নগরীর মানিকপীর টিলায় সর্বমোট ৫৭২ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারীতে ৭৭ জন, ফেব্র“য়ারীতে ১৪৪ জন, মার্চে ৫৮ জন, এপ্রিলে ৪৭ জন, মেতে ১০৩ জন ও জুন মাসে ১৪৩ জনের লাশ দাফন করা হয়। এর মধ্যে মে মাসে ৬ জন ও জুন মাসে আরো ৬ জনসহ মোট ১২ জন করোনা রোগীর লাশ স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক মানিকপীর টিলার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
দরগা কবরস্থানে বর্তমান পরিস্থিতিতে লাশ দাফনের বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগা মাজার কমিটির সেক্রেটারী সামুন মাহমুদ খান বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনায় দরগা কবরস্থানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী কারোও লাশ দরগা কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে না। তাছাড়া কবরস্থানে জায়গার পরিমাণও কম আর প্রতিদিনই মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। মৃত্যুর পর অধিকাংশ মানুষের আত্মীয় স্বজনের প্রথম ইচ্ছা থাকে দরগা কবরস্থানে দাফন করার কিন্তু জায়গা কম থাকায় আমরা বর্তমানে দরগা মহল্লা এবং আশপাশ যেসব এলাকায় কবরস্থান নেই এইসব এলাকার কেউ মারা গেলে দরগা কবরস্থানে দাফনের সুযোগ দিচ্ছি। তবে যাদের আত্মীয় স্বজন বিশেষ করে বাবা-মা’র কবর রয়েছে দরগায় তাদের কেউ মারা গেলে তাদের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।