এ যেন এমন এক দুষ্টচক্র, যাকে কোনোভাবেই শোধরানো সম্ভব নয়। অতীতে টিআর, কাবিখা, ভিজিএফ, বিশেষ ত্রাণ সাহায্য এমন কোনো উদ্যোগ ছিল না, যাতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। বরাবরই রাজনৈতিক কর্মী, জনপ্রতিনিধি, এমনকি কিছুসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যেত এসব দুর্নীতির সঙ্গে। একই রকম অভিযোগ উঠেছে সরকারের সাম্প্রতিক সহায়তা কর্মসূচিতে। করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে সরকার ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষের তালিকা তৈরি করে নগদ সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মাঠপর্যায় থেকে যে তালিকা পাওয়া যায় তাতে শুধু দুর্নীতি নয়, এক মহাদুর্নীতির চিত্র উঠে আসে। ৫০ লাখের মধ্যে ২৮ লাখ মানুষেরই তথ্যে গড়মিল রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের পাঠানো তালিকায় দরিদ্রদের চেয়ে সচ্ছল ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেখা যায়। তালিকা প্রণয়নেই এমন গড়মিল থাকলে দরিদ্র মানুষের স্বার্থে সরকারের নেওয়া কর্মসূচি সফল হবে না। মাঠপর্যায়ের এই তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়। আর তাতেই বেরিয়ে আসে বিপুল গরমিলের চিত্র। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তে উঠে আসে যে মাঠপর্যায়ের তালিকায় দুই হাজার ৮৫৫ জন সরকারি কর্মচারীর নাম রয়েছে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি মূল্যের সঞ্চয়পত্র রয়েছে এমন ৫৫৭ জনের নাম রয়েছে তালিকায়। সরকারি চাকরিজীবন শেষ করে পেনশন ভোগ করছেন এমন ছয় হাজার ৭৮৬ জনের নাম রয়েছে তালিকায়। দুই লাখ ৯৫ হাজার ৯১৯ জনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঘুরেফিরে একই ব্যক্তির নাম লেখা হয়েছে। এর বাইরে আট লাখ ২৯ হাজার ৯৪৮ জনের যে মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডের বিপরীতে সেগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই। অতীতে অনেকের নামের বিপরীতে একই ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছিল। সাত লাখ ৯৮ হাজার ৬৭৭ জনের জন্য যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে, তাতে উল্লিখিত জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডের নম্বর ও জন্ম তারিখ নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে রক্ষিত তথ্যের সঙ্গে মেলে না। ছয় লাখ ৩৮ হাজার ৫২৬ জনের ক্ষেত্রে প্রদত্ত মোবাইল নম্বরের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডের বিপরীতে নিবন্ধনকৃত মোবাইল নম্বরের মিল নেই। তাহলে এসব মোবাইল নম্বরের বিপরীতে থাকা বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানো হলে সে টাকা কারা পাবে? নিশ্চয়ই সেই দুষ্টচক্র।
অর্থ মন্ত্রণালয় দুর্নীতি রোধে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। আমরা চাই, দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করা হোক এবং যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।