সড়ক ও রেলপথের মতো দেশের নৌপথও সমূহ ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ হয়ে উঠছে ক্রমশ। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে সুগন্ধা নদীতে চলমান অবস্থায় এমভি অভিযান-১০ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, নৌপথও কম বিপদসঙ্কুল নয়। লঞ্চটিতে সর্বমোট কতজন যাত্রী ছিল এবং কতজন আগুনে পুড়ে অসহায় মৃত্যুবরণ এবং মাঝ রাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ ও আহত হয়েছেন, এর সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব না হলেও ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথের বিষয়টি উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। ইতোমধ্যে লঞ্চটির মালিকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মালিক নিজেই স্বীকার করেছেন, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছিল লঞ্চটিতে। এর ইঞ্জিন ছিল পুরনো ও জরাজীর্ণ। যাত্রীসংখ্যা অনুপাতে বয়া ও লাইফ জ্যাকেট ছিল না এতে। ফিটনেস সনদ থাকা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে লঞ্চটির। এরকম অবস্থায় চলাচল করছে দেশের অধিকাংশ যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নৌপরিবহন অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিটিসি, মালিকপক্ষসহ কারও তরফে নেই কোন নজরদারি, মনিটরিং সর্বোপরি জবাবদিহি। ফলে সড়ক ও রেলপথের মতো নৌপথেও দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রের খবর, ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫ বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নৌদুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু ঘটেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের।
গত বছর রাজধানীর ফরাশগঞ্জের শ্যামবাজারের সন্নিকটে দিনে-দুপুরে ঘটেছে ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনা। মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে সকালে এমএন মর্নিং বার্ড আসছিল রাজধানী অভিমুখে। ফরাশগঞ্জ অতিক্রমকালে এমভি ময়ূর নামে আরেকটি লঞ্চ অকস্মাৎ ধাক্কা দিয়ে ওপরে উঠে যায় মর্নিং বার্ডের। মাত্র ৯ সেকেন্ডের মধ্যেই তলিয়ে যায় লঞ্চটি। সলিল সমাধি ঘটে শতাধিক যাত্রীর। নৌ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় অন্তত ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের ভাষ্য, ভয়াবহ ও মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার জন্য দুই লঞ্চের সারেং ও সহকারীই দায়ী। দুর্ঘটনার পরপরই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অধীনে অন্তত দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যে প্রশ্নটি সব ছাপিয়ে সামনে আসে তা হলো, প্রকাশ্য দিবালোকে এ রকম একটি ভয়ানক ও মর্মান্তিক নৌদুর্ঘটনা ঘটবে কেন? নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি একটি হত্যাকান্ড। দেশের নৌপথকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলে গণ্য করা হয়। আর সেখানেই কিনা এহেন অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা।
নৌপথ নিরাপদ রাখার জন্য গঠন করা হয়েছে নৌটহল পুলিশ, ফোরশোর গার্ড। তবে সবার আগে অত্যাবশ্যক নৌচালকের দায়িত্বশীলতা, প্রশিক্ষণ, মানবিকতা, সর্বোপরি নৌযানের ফিটনেস।