কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী ৩০ জানুয়ারি জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পরবর্তী ধাপে কানাইঘাটে নির্বাচন হতে পারে। এ কারণে এই তিন পৌরসভায় নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়েছে। চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। সময় পূর্ণ না হওয়ায় বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে না। আরো দেড় বছর পর এই পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে- নবগঠিত বিশ্বনাথ পৌরসভায় এ দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। প্রশাসক দিয়ে চলছে এ পৌরসভার কার্যক্রম। এখনো পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি। এসব কাজ চূড়ান্ত হওয়ার পর পৌরসভার নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও কানাইঘাটের পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও এলাকাভিত্তিক মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই প্রার্থীরা মাঠে নামছেন। এরপর তারা রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে দলীয় প্রতীকের জন্য লড়াই চালাবেন। দেশের সীমান্তবর্তী পৌরসভা জকিগঞ্জ। এই পৌরসভা এখনো গ্রামীণ আদলেই রয়েছে। নদী তীরবর্তী এ পৌরসভায় বড় আকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু না হলেও গ্রামীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, বাজারের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলররা আন্তরিক ছিলেন। এই উন্নয়ন বজায় রাখতে পারলে খুব দ্রুত জকিগঞ্জ শহরে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার কাউন্সিলর রিপন আহমদ।
আসন্ন জকিগঞ্জ পৌরসভায় ইতিমধ্যে একাধিক আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। তারা চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার হাজী খলিল উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাবুল হোসাইন। এদের মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থিতায় বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী খলিল উদ্দিন এগিয়ে রয়েছেন। অন্যরা নৌকার মনোনয়ন পেতে দলের ভেতরে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন।
এ পৌরসভায় বিএনপিতেও রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এরমধ্যে রয়েছেন, সাবেক মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ, জেলা বিএনপি’র সাবেক উপদেষ্টা বদরুল হক বাদল, উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসনে আরা রীনা। জাতীয় পার্টি থেকে একক প্রার্থী সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক, আল ইসলাহ সভাপতি কাজী মাওলানা হিফজুর রহমান ও স্বতন্ত্র হিসেবে সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান জাফরুল ইসলাম মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন আগামী ৩০শে জানুয়ারি। ইতিমধ্যে এ পৌরসভার মেয়র পদের প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। প্রায় প্রতিদিনই তারা পৌরসভায় পাড়া বা এলাকায় করছেন মতবিনিময়। এ পৌরসভার কনিষ্ঠ মেয়র ছিলেন জাকারিয়া আহমদ পাপলু। তিনি এবারো মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন। বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাবেলও প্রার্থী হবেন। এই দুইজনের মধ্যে যে কেউ পেতে পারেন আওয়ামী লীগের টিকিট। এ ছাড়া প্রয়াত মেয়র সিরাজুল জব্বার চৌধুরীর ছেলে মাজেদ শরীফ চৌধুরীও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে লড়াইয়ে নেমেছেন পৌর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীন ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন চৌধুরী।
কানাইঘাট পৌরসভার তফসিল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এরপরও কানাইঘাটে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। গ্রামে গ্রামে চলছে বৈঠক। এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। বিদ্রোহী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে মেয়র হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন। তিনি এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে লবিং চালাচ্ছেন। এ ছাড়া- সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, সহ- সভাপতি জামাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম হারুন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কেএইচএম আব্দুল্লাহ, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মাসুক আহমদ মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
এ ছাড়া বিএনপি থেকে পৌর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি শরিফুল হক ও ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমীন নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তাদের দুইজনের মধ্যে যেকোনো একজনই হবেন এ পৌরসভায় ধানের শীষের কাণ্ডারি। জামায়াতে ইসলামী থেকে সাবেক মেয়র প্রার্থী কেএইচএম ওলিউল্লাহ প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া- জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমদ প্রার্থী হচ্ছেন। আর বিএনপি নেতা সোহেল আমীন দলীয় প্রতীক না চেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হবে বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন। কানাইঘাট পৌরসভা এখনো গ্রামীণ জনপদ। বর্তমান মেয়র উন্নয়ন সহযোগী জাইকার অর্থায়নে বেশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। আরো কয়েকটি প্রকল্প পাইপলাইনে আছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে কানাইঘাট পৌরসভা পূর্ণাঙ্গ শহরে পরিণত হবে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।